সিঁধ কেটে ঘরে ঢুকে মা-মেয়েকে ধর্ষণ, আওয়ামী লীগ নেতা গ্রেপ্তার
প্রকাশিত হয়েছে : ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
দেশ ডেস্ক:: নোয়াখালীর সুবর্ণচরে সিঁধ কেটে ঘরে ঢুকে মা-মেয়েকে ধর্ষণের ঘটনায় করা মামলার প্রধান আসামি আওয়ামী লীগ নেতা আবুল খায়ের প্রকাশ ওরফে মুন্সি মেম্বারকে (৫০) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার বিকেলে জেলার সদর উপজেলার কাদির হানিফ ইউনিয়ন থেকে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ও চরজব্বার থানা-পুলিশ যৌথ অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে।
গ্রেপ্তার মুন্সি মেম্বার চরওয়াপদা ইউনিয়নের চরকাজী মোখলেছ গ্রামের বাসিন্দা। তিনি চরওয়াপদা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি এবং একই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য।
নোয়াখালী পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ভুক্তোভোগী নারীর দায়ের করা মামলার প্রধান আসামি আবুল খায়ের ওরফে মুন্সি মেম্বারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
এর আগে আজ দুপুরে ভুক্তোভোগী নারী (৩০)তাকে ও তার মেয়েকে ধর্ষণ ও নগদ টাকাসহ স্বর্ণালঙ্কার লুটের ঘটনায় সূবর্ণচরের চরজব্বর থানায় মামলা করেছেন। এতে মুন্সি মেম্বারকে প্রধান আসামি করা হয়। মামলায় অপর আসামিরা হলেন চর কাজী মোখলেছ গ্রামের মো. হারুন (৪২) ও অপরজন অজ্ঞাত।
এদিকে, আজ বিকেলে ভুক্তোভোগী মা-মেয়ের চিকিৎসা ও ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য ২৫০ শয্যার নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের গাইনি সার্জারি বিভাগে ভর্তি করা হয়েছে।
হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক আবদুল মন্নান শাকিল বলেন, ‘ভুক্তভোগী মা-মেয়ে খুবই অসুস্থ। তাদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। পরীক্ষা শেষে বিস্তারিত জানানো হবে।’
এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও অপস্) বিজয়া সেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘এলাকাবাসীর বক্তব্য অনুযায়ী প্রধান আসামি মুন্সি মেম্বারের স্বভাব-চরিত্র ভালো নয়। তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’
এর আগে সোমবার রাত ২টায় বাড়িতে মা-মেয়েকে একা পেয়ে সিঁধ কেটে একজন দরজা খুলে দেয়। পরে আরও দুইজন ঘরে ঢুকে তিন সন্তানের জননী (৩০) ও তার পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়েকে (১২) ধর্ষণ করে। পরে ৯৯৯-এ কল পেয়ে চরজব্বর থানা-পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ভুক্তভোগীদের উদ্ধার করে।
ভুক্তভোগী নারীর অভিযোগ, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মুন্সি মেম্বার দীর্ঘদিন থেকে তাকে উত্ত্যক্ত করে আসছিলেন। মাঝেমধ্যে মোবাইল ফোনে কল করে কুপ্রস্তাব দিতেন। কথা না শুনলে খারাপ পরিণতির হুমকি দিতেন। সোমবার রাতে বাড়িতে কোনো পুরষ না থাকার সুযোগে সিঁধ কেটে ঘরে ঢুকে হাত-মুখ বেঁধে মাকে দুজন এবং মেয়ের অপরজন ধর্ষণ করেন। পরে মা-মেয়ের নাকে কানের স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ টকা নিয়ে আসামিরা চলে যান।
নির্যাতনের শিকার ওই নারীর স্বামী (৪২) বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। দিনমজুরি করে দিনযাপন করি। কয়েকমাস আগে ওই এলাকায় পাঁচ শতক জমি কিনে বাড়ি করি। আসামিরা খুবই খারাপ প্রকৃতির। আমি এ জঘন্যতম ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের ফাঁসি চাই।’
চর ওয়াপদা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুল মন্নান বলেন, ‘মা-মেয়েকে ধর্ষণের ন্যাক্কাজনক ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের ফাঁসির দাবি জানাচ্ছি। আওয়ামী লীগ সভাপতি আবুল খায়ের মুন্সীর বিষয়টি সূবর্ণচর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. চৌধুরীকে জানানো হয়েছে।’
সুবর্ণচর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. হানিফ চৌধুরী বলেন, ‘ধর্ষণের দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তির দলীয় পরিচয় থাকতে পারে না। এই মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আবুল খায়ের মুন্সী মেম্বারকে দলীয় সভাপতির পদসহ সব কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেওয়া হবে।’