দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে গাজা, খাদ্য সংকটে ১১ লাখ মানুষ
প্রকাশিত হয়েছে : ২০ মার্চ ২০২৪
দেশ ডেস্ক:: টানা পাঁচ মাসেও বেশি সময় ধরে চলা ইসরাইলি গণহত্যা ও আগ্রাসনের ফলে গাজা উপত্যকার উত্তরে মে মাসের মধ্যে দুর্ভিক্ষ শুরু হতে পারে এবং জুলাইয়ের মধ্যে তা অন্যত্র ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ সমর্থিত ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশন (আইপিসি)। গত ১৮ মার্চ সোমবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এই আশঙ্কার কথা জানিয়েছে আইপিসি। খবর ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজার উত্তরাঞ্চলে চলমান সংঘাতের মধ্যে আটকা পড়েছেন প্রায় তিন লাখ মানুষ। এতে করে উপত্যকাজুড়ে অনাহারে থাকা মানুষের সংখ্যা বেড়ে ১১ লাখ হয়েছে। যা গাজার মোট জনসংখ্যার অর্ধেক।
আরও বলা হয়েছে, অপুষ্টি এবং খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা সম্ভবত গাজার উত্তরে দুর্ভিক্ষের মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে এবং ক্ষুধা সংশ্লিষ্ট মৃত্যুর হার শীঘ্রই বাড়তে পারে।
চলমান পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে চলতি মার্চ থেকে মে মাসের মধ্যে সেখানে দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি দেখা দিতে পারে বলেও পূর্বাভাস দিয়েছে সংস্থাটি। এদিকে দুর্ভিক্ষের এ পরিস্থিতির জন্য ইসরাইলকে দায়ী করেছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পররাষ্ট্রনীতির প্রধান জোসেপ বোরেল।
সোমবার বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে ইউরোপিয়ান হিউম্যানিটেরিয়ান ফোরামের দুইদিনের সম্মেলনে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেওয়া এক ভাষণে এ অভিযোগ করেন বরেল।
দুর্ভিক্ষকে যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, গাজায় আমরা আর দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে নেই। আমরা এখন দুর্ভিক্ষের মধ্যে রয়েছি যা হাজার হাজার মানুষকে প্রভাবিত করছে। এই পরিস্থিতিকে ‘পুরোপুরি অগ্রহণযোগ্য’ বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি।
অন্যদিকে ইসরাইলি গণহত্যা ও আগ্রাসনে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় মারাত্মক অপুষ্টিতে ভোগা শিশুর সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে জানিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ শিশু তহবিল (ইউনিসেফ)। মাত্র এক মাসের ব্যবধানে এমনটা হয়েছে উল্লেখ করে সংস্থাটি বলছে, গাজায় মারাত্মক অপুষ্টিতে ভোগা শিশুর সংখ্যা অনেক। ক্ষুধা ও অপুষ্টিতে কাতর এই শিশুদের অনেকেরই শরীরে কান্না করার মতো পর্যাপ্ত শক্তি পর্যন্ত অবশিষ্ট নেই।
গেলো পাঁচ মাসের বেশি সময় ধরে চলা ইসরাইলের বর্বর হামলায় গাজায় ১৩ হাজারের বেশি শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
এর আগে গেলো বছরের অক্টোবর মাসের ৭ তারিখে ইসরাইলে এই দশকের সবচেয়ে বড় সামরিক অভিযান চালায় গাজার হামাস সরকার। এর পরপরই গাজায় গণহত্যা শুরু করে ইসরাইল। এ আগ্রাসনে ৩১ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। আহতের সংখ্যা ৭০ হাজার ছাড়িয়েছে।
এর পরপরই গাজায় হামলা শুরু করে ইসরাইল। শুধু আকাশপথে নির্বিচার বোমা হামলা নয়, গাজায় স্থল অভিযানও চালিয়ে আসছে দখলদার বাহিনী।
গাজায় চলমান এই গণহত্যায় ইসরাইলকে সরাসরি সহযোগিতা করতে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানির মতো পশ্চিমা দেশগুলো। অন্যদিকে বাংলাদেশ, চীন, রাশিয়া, ইরানের মতো দেশগুলো এ গণহত্যার প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে।