ফ্রিডম অব দ্যা সিটি সম্মাননায় ভূষিত হলেন নাজ ইসলাম
প্রকাশিত হয়েছে : ৩১ মে ২০২৪
সমাজসেবায় বিশেষ অবদানের জন্য ব্রিটেনের সম্মানজনক পুরষ্কার ‘দ্যা ফ্রিডম অব দ্যা সিটি অব লন্ডন’ পেয়েছেন বৃটিশ-বাংলাদেশী বংশদ্ভূত নাজ ইসলাম। গত ২৮ মে মঙ্গলবার লন্ডনের ঐতিহ্যবাহী গিল্ডহল এর লর্ড চেম্বারলিন চেম্বারে আনুষ্ঠানিকভাবে নাজ ইসলামের হাতে এ সম্মননা তুলে দেয়া হয়।
নাজ ইসলাম নর্থহাম্পটনের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, বৃটেনের মেইনস্ট্রিম চ্যারিটি সংগঠক ও কমিউনিটি লীডার হিসাবে পরিচিত। বিগত দুই যুগ ধরে তিনি যুক্তরাজ্যে কমিউনিটির সেবায় কাজ করছেন।
অনুষ্ঠানে নাজ ইসলামকে ‘ডিক্লারেশন দ্যা ফ্রিডম অব দ্যা সিটি অব লন্ডন’ পড়তে আহ্বান জানান মেয়র অব লন্ডন লর্ড প্রফেসর মিশেল মাইকেলি। তিনি অতিথি ,পরিবারের সদস্য, সহকর্মী ও শুভাকাঙ্খীদের উপস্থিতিতে নাজ ইসলামের হাতে ‘দ্যা ফ্রিডম অব দ্যা সিটি অব লন্ডন’ সম্মাননা এওয়ার্ড তুলে দেন।
১২৩৭ সাল থেকে দ্যা ফ্রিডম অব দ্যা সিটি অব লন্ডন (ফ্রীম্যানশীপ) সম্মাননা চালু রয়েছে। এটি একটি আন্তর্জাতিক মানের সম্মাননা।
এওয়ার্ড অনুষ্ঠানে অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন লর্ড রামি রানঞ্জি সিবিই, বিশিস্ট সমাজসেবী ও ব্যবসায়ি ড. সানওয়ার চৌধুরী,বিসিএর প্রেসিডেন্ট ওলী খান এমবিই, চীফ ট্রেজারার টিপু রহমান,ক্রয়ডনের সাবেক মেয়র মো. মুজিবুর রহমান, বিশিস্ট লেখক, মা ও শিশুরোগ বিশেজ্ঞ ডা. জাকি রেজওয়ানা আনোয়ার,সিএফওবি এর ফাউন্ডার রাফাত খান, বৃটিশ আর্মি অফিসার আশোক কুমার, কাউন্সিলার ইমরান চৌধুরী বিইএম,কাউন্সিলার রিটা বেগম, ব্যবসায়ি সিরাজুল ইসলাম ও আব্দুল আহাদ প্রমুখ।
ব্যবসা ও সমাজসেবায় কমিউনিটিতে বিশেষ অবদানের জন্য ২০২৩ সালে নর্থহ্যাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাজ ইসলামকে সম্মানসূচক ডিগ্রি প্রদান করা হয়। এছাড়াও একই বছর চ্যারিটি ও সেবামূলক কাজে অবদানের জন্য নর্থহ্যাম্পটন কাউন্সিলের মেয়র তাকে ‘হার্ট অব নর্থহ্যাম্পটন এওয়ার্ড‘ –এ ভূষিত করে। তিনি যুক্তরাজ্যে কারী ইন্ড্রাস্ট্রির প্রাচীন ও বৃহত্তম সংগঠন বাংলাদেশ ক্যাটারার্স এসোসিয়েশন ( বিসিএ) এর প্রেস এন্ড পাবলিকেশন সেক্রেটারীর দায়িত্বে আছেন।
নাজ ইসলাম বৃটেনের এথনিক মাইনোরিটির তরুণদের শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও সামাজিক কাজে আত্নবিশ্বাসী করে গড়ে তুলতে কাজ করা সরকারী অর্থায়নে পরিচালিত স্বনামধন্য চ্যারিটি প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি প্রোমোশন এন্ড প্রিভেনশন এর কো-অর্ডিনেটর। প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে তিনি অসংখ্য তরুণদের বর্ণ ও জাতিগত বৈষম্যের স্রোত থেকে তুলে তাদের আলোকিত জীবন গড়তে বিশেষ ভূমিকা রাখছেন।
করোনা মহামারির লকডাউন ক্রাইসিস সময়ে নাজ ইসলাম নর্থহ্যাম্পটন শহরের নর্থ হ্যাম্পটন জেনারেল হাসপাতাল, দ্যা হোপ সেন্টার, কেয়ার হোম ও নাইট শেন্টার গুলোতে নিয়মিতভাবে খাবারের প্যাকেট বিতরণ করেছেন। তিনি একজন নিবেদিতপ্রাণ কমিউনিটি কর্মী। কমিউনিটির বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী কাজে তার যেমন সক্রিয় অংশগ্রহন রয়েছে তেমনি লোকাল ফুড ব্যাংক ও তরুণ এন্টারপেনারদের সামাজিক কাজে উদ্ধুদ্ধ করণেও কাজ করছেন। একজন ভলান্টিয়ার হিসাবে তিনি ব্রিটেনে বিভিন্ন সময়ে নিডি মানুষদের জন্য এক লক্ষ পাউন্ড সংগ্রহ করেছেন। নাজ ইসলাম বাংলাদেশে আর্ত মানবতায় ধারাবাহিকভাবে নিডি মানুষের পাশে রয়েছেন। শিক্ষার উন্নয়নে দুই ভাইয়ের উদ্যোগে ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠা করেন বড়দিরারাই উলুম মাদ্রাসা। ১৬০ জন বোর্ডিং শিক্ষার্থীকে জ্ঞানের আলো দান কারী প্রতিষ্ঠানের তিনি চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন।
সম্মাননা গ্রহণ করে নাজ ইসলাম বলেন, এই সম্মানটি পাওয়া আমার কাছে বিশ্বমানের এবং আমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশের ভাষাও বর্ণনাতীত। এই সম্মান ও বিশেষ মুহুর্তটি আমি আজীবন ভালো কাজের মাধ্যমে ধরে রাখবো,ইনশাল্লাহ। আমি অত্যন্ত আন্তরিকভাবে নর্থহ্যাম্পটন এবং বাংলাদেশে কমিউনিটির বিশেষ করে নিডি মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। তাদের ভালোবাসা ও সম্মানকে আমি বিভিন্ন চ্যারিটি কাজের মাধ্যমে ফিরিয়ে দেবার চেষ্টা করেছি। এবং আগামীতেও এই কাজটি অব্যাহতভাবে করে যেতে চাই।
বিশেষ অতিথি লর্ড রামি রানঞ্জি সিবিই বিগত এক দশক ধরে নাজ ইসলামকে চেনার অভিজ্ঞতাকে তুলে ধরে তিনি বলেন, কাজের প্রতি অত্যন্ত নিবেদিত পরিশ্রমি কমিউনিটি লীডার। কোন দায়িত্ব নিলে সেটি গুরুত্ব সহকারে সম্পাদন করা তার একটি বড় গুণ। ব্রিটিশ -বাংলাদেশী কমিউনিটির জন্য তিনি একজন রোল মডেল।
বিশেষ অতিথি কাউন্সিলার ইমরান আহমদ চৌধুরী বিইএম বলেন,এই সম্মানটি মূলত নাজ ইসলামের কমিউনিটিতে তার ধারাবাহিক সামাজিক ও সেবামূলক কাজের মূল্যায়ন। অত্যন্ত পরিশ্রমী ও উদ্যোমী নাজ ইসলাম ব্যবসায়িক ব্যস্ততার মধ্যেও নর্থহ্যাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চ শিক্ষা অর্জন করেন যা কমিউনিটিতে আলোকিত দৃষ্টাত হতে পারে।
নাজ ইসলামের জন্ম নর্থ হাম্পটন শহরে। তার বয়স যখন পনের তখন থেকে তিনি রেস্টুরেন্টে কাজ করছেন। নাজ ইসলাম এর দেশের বাড়ি সিলেট জেলার ওসমানী নগর উপজেলার দয়ামীর ইউনিয়নের বড়দিরারাই গ্রামে। তার বাবার নাম (মরহুম) হাজী আফতাব আলী। মাতা কইতুন বিবি। স্ত্রী হালিমা বেগম। তিনি দুই সন্তানের জনক। তার দাদা মরহুম মো. নইমুল্লাহ সারং ১৯৪১ সালে বিলাতে আসেন। সংবাদ বিজ্ঞপ্তি