বেনজীর-মতিউর পরিবারের সম্পদের তথ্য চেয়ে দুদকের নোটিশ
প্রকাশিত হয়েছে : ০৩ জুলাই ২০২৪
দেশ ডেস্ক:: পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যদের সম্পদের বিবরণী চেয়ে নোটিশ দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ ছাড়া জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক সদস্য মতিউর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদেরও সম্পদের তথ্য চেয়েছে সংস্থাটি। মঙ্গলবার বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান দুদকের সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন। তিনি বলেন, দুই পরিবারের সদস্যদের আর কোনো সম্পদ আছে কিনা, তা জানতে নোটিশ জারি করা হয়েছে।
খোরশেদা ইয়াসমীন জানান, প্রাথমিক অনুসন্ধানে বেনজীর আহমেদ, তার স্ত্রী জীশান মীর্জা, বড় মেয়ে ফারহীন রিশতা বিনতে বেনজীর এবং মেজো মেয়ে তাহসীন রাইসা বিনতে বেনজীরের নামে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের প্রাথমিক তথ্য পাওয়া গেছে। তাদের নামে ও বেনামে দেশে-বিদেশে আরও সম্পদ রয়েছে বলে তথ্য রয়েছে। তাই দুদক আইন অনুযায়ী পৃথক পৃথক সম্পদ বিবরণী দাখিলের নোটিশ জারি করেছে।
দুদকের নোটিশে বলা হয়েছে, প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে অনুসন্ধান করে দুদকের স্থির বিশ্বাস জন্মেছে যে, আপনারা জ্ঞাত আয় বহির্ভূত স্বনামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ সম্পদ/সম্পত্তির মালিক হয়েছেন। নিজ ও আপনাদের ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তির নামে-বেনামে অর্জিত যাবতীয় স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ, দায়-দেনা, আয়ের উৎস ও তা অর্জনের বিস্তারিত বিবরণী কমিশনে দাখিল করবেন।
এ আদেশ পাওয়ার ২১ কার্যদিবসের মধ্যে নির্ধারিত ছকে সম্পদ বিবরণী দাখিলে ব্যর্থ হলে কিংবা মিথ্যা সম্পদ বিবরণী দাখিল করলে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ৫(২) ধারা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে। দুর্নীতি ও বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগের বিষয়ে গত ২৩ ও ২৪শে জুন দুদকে হাজির হতে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল বেনজীর ও তার পরিবারকে। তারা উপস্থিত না হয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে অভিযোগের লিখিত বক্তব্য জমা দেন।
সূত্রে জানা যায়, বেনজীর আহমেদ সপরিবারে বিদেশে রয়েছেন, এখনো দেশে ফেরেননি। অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে বেনজীর আহমেদকে ৬ই জুন এবং স্ত্রী জিশান মীর্জা ও দুই মেয়েকে ৯ই জুন প্রথম দফায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করে দুদক।
তখন তারা সময় চান। পরে ২৩ ও ২৪শে জুন হাজির হতে বলা হয়। বেনজীর আহমেদের অবৈধ সম্পদ নিয়ে গত ৩১শে মার্চ একটি দৈনিক পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। পরে প্রতিবেদনটি যাচাই-বাছাই শেষে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। গত ২২শে এপ্রিল বেনজীর, তার স্ত্রী জিশান মীর্জা, দুই মেয়ে ফারহিন রিশতা বিনতে বেনজীর ও তাশিন রাইসা বিনতে বেনজীরের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপ-পরিচালক হাফিজুল ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিশেষ অনুসন্ধান টিম অভিযোগটি অনুসন্ধান করছে।
গত ২৩শে মে বেনজীর আহমেদের ৮৩টি দলিলের সম্পত্তি ও ৩৩টি ব্যাংক হিসাব জব্দের নির্দেশ দেন আদালত। এরপর ২৬শে মে বেনজীর ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা ১১৯টি জমির দলিল, ২৩টি কোম্পানির শেয়ার ও গুলশানের চারটি ফ্ল্যাট জব্দের আদেশ দেন আদালত। এই ধারাবাহিকতায় বেনজীর আহমেদ ও তার স্ত্রী-সন্তানদের স্থাবর সম্পদ জব্দ এবং ব্যাংক হিসাব জব্দের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এরইমধ্যে সেসব সম্পত্তি দেখভালে রিসিভার নিয়োগ করা হয়েছে।
মতিউর পরিবারেরও সম্পদের তথ্য চায় দুদক: গতকাল দুদক সচিবের ব্রিফিংয়ে রাজস্ব বোর্ডের সাবেক সদস্য মতিউর রহমান ও তার পরিবারের সম্পদের তথ্য চেয়েও নোটিশ জারির কথাও জানানো হয়। সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন জানান, অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে মতিউর রহমান, তার প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজ, প্রথম পক্ষের সন্তান তৌফিকুর রহমান অর্ণব, ফারজানা রহমান ইপ্সিতা এবং দ্বিতীয় স্ত্রী শাম্মী আখতার শিবলীর নামে দুদক আইন ২০০৪ এর ২৬(১) ধারা ও দুদক বিধিমালা ২০০৭ এর ১৭(১) মোতাবেক সম্পদ বিবরণীর নোটিশ জারি করেছে কমিশন।
নোটিশগুলোতে বলা হয়, প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে অনুসন্ধান করে দুদকের স্থির বিশ্বাস জন্মেছে যে, আপনারা জ্ঞাত আয়বহির্ভূত স্বনামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ সম্পদ/সম্পত্তির মালিক হয়েছেন। নিজ ও আপনাদের ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তির নামে-বেনামে অর্জিত যাবতীয় স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ, দায়-দেনা, আয়ের উৎস ও তা অর্জনের বিস্তারিত বিবরণী কমিশনে দাখিল করবেন। এ আদেশ পাওয়ার ২১ কার্যদিবসের মধ্যে নির্ধারিত ছকে সম্পদ বিবরণী দাখিলে ব্যর্থ হলে কিংবা মিথ্যা সম্পদ বিবরণী দাখিল করলে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ৫(২) ধারা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে।
এর আগে গত ৩০শে জুন দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে পাঠানো চিঠিতে মতিউর রহমান, তার স্ত্রী ও সন্তানদের নাম উল্লেখ করে ঢাকা, নরসিংদী ও মুলাদির সাব-রেজিস্ট্রার অফিস ও ভূমি অফিস, রাজউক, জয়েন্ট স্টক কোম্পানিসহ বিভিন্ন দপ্তরে পৃথক পৃথক চিঠি দেয়া হয়। আলোচিত মতিউর রহমানের দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের তথ্য অনুসন্ধানে গত ২৩শে জুন তিন সদস্যের টিম গঠন করে দুদক। সংস্থাটির উপ-পরিচালক আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্ব টিম কাজ করছে। গত ৪ঠা জুন তার বিরুদ্ধে দুদকে মতিউর ও তার পরিবারের সদস্যদের বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করে। পরে ২৪শে জুন মতিউর রহমান, তার স্ত্রী লায়লা কানিজ ও ছেলে আহম্মেদ তৌফিকুর রহমান অর্ণবের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা দেয় আদালত।
এনবিআর সদস্য ও কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনালের সাবেক প্রেসিডেন্ট মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে গত দুই যুগে চারবার দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। এসব অভিযোগ পৃথকভাবে অনুসন্ধান করে দুদক। প্রতিবারই দুদক থেকে অব্যাহতি পান তিনি। বর্তমানে তাকে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে বদলি করা হয়েছে।