কেমন হবে স্টারমার সরকারের পররাষ্ট্র ও অভিবাসন নীতি
প্রকাশিত হয়েছে : ১০ জুলাই ২০২৪
দেশ ডেস্ক:: ভূমিধস বিজয়ের মাধ্যমে ১৪ বছর পর যুক্তরাজ্যে ক্ষমতায় আসা মধ্যবামপন্থি লেবার পার্টির পররাষ্ট্র ও অভিবাসন নীতি কেমন হবে, তা নিয়ে কৌতূহল রয়েছে। নতুন প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার লেবার পার্টির দীর্ঘদিনের নীতিতে পরিবর্তন এনে দলকে মধ্যপন্থি ধারায় নিয়েছেন। ফলে তাঁর পররাষ্ট্র ও অভিবাসন নীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের সম্ভাবনা ক্ষীণ।
এএফপি জানায়, স্টারমারের প্রথম মাসটি হবে কূটনৈতিক দৌড়ঝাঁপের। চলতি মাসেই তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
যুক্তরাজ্যের চীন নীতি নিয়ে স্টারমার চাপে পড়তে পারেন। গত বছর তিনি বলেছিলেন, বাণিজ্য এবং প্রযুক্তির মতো ইস্যুতে চীনের ওপর যুক্তরাজ্যের নির্ভরশীলতা কমাতে হবে। তবে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার মতো বিষয়গুলোতে সহযোগিতা অব্যাহত রাখা যায়। আগামী নভেম্বরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প বিজয়ী হলে স্টারমারের এ কাজ জটিল হতে পারে। ট্রাম্প বেইজিংয়ের ওপর আরও কঠোর হওয়ার জন্য মিত্রদের ওপর চাপ বাড়াতে পারেন।
লেবার পার্টি বলেছে, তারা ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যার ফলে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান সম্ভব হবে। তবে এটি করার জন্য কোনো সময়সীমা নির্ধারণ করেনি। অন্যান্য প্রতিশ্রুতির মধ্যে রয়েছে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির জন্য চাপ দেওয়া, সব জিম্মির মুক্তি এবং গাজায় সাহায্যের পরিমাণ বৃদ্ধি করা। তবে স্টারমারের নেতৃত্বাধীন লেবার পার্টি ইসরায়েলের প্রতি আগের চেয়ে বেশি দুর্বলতা দেখাচ্ছে। ফলে এবারের নির্বাচনে লেবার প্রার্থীদের হারিয়ে ফিলিস্তিনপন্থি বেশ কয়েকজন স্বতন্ত্র প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন।
যুক্তরাজ্য ইউক্রেনের অন্যতম কট্টর সমর্থক এবং রাশিয়ার আক্রমণ প্রতিহত করতে অর্থ, অস্ত্র এবং সৈন্য প্রশিক্ষণ প্রদান করেছে। স্টারমারও ইউক্রেনের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখার ওপর জোর দিয়েছেন। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে ব্যক্তিগতভাবে সেই বার্তা পুনরায় নিশ্চিত করার জন্য স্টারমার দ্রুত তাঁর সঙ্গে দেখা করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে ‘ইউক্রেনে আগ্রাসী’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন স্টারমার ।
লেবার পার্টির অভিবাসন নীতি
বিবিসি জানায়, এবারের নির্বাচনে যেসব ইস্যু নিয়ে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো প্রচারণা চালিয়েছিল, তার মধ্যে সম্ভবত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল অভিবাসন। কনজারভেটিভ পার্টি অবশ্য বরাবরই তাদের প্রচারে অভিবাসনের প্রশ্নটিকে খুবই গুরুত্ব দিয়ে থাকে। তবে এবারে লেবার পার্টিও ঠিক সেই একই রাস্তায় হেঁটেছে।
প্রতিবছর হাজার হাজার লোক ইউরোপের মূল ভূখণ্ড থেকে ডিঙি বা ছোট নৌকায় চেপে ইংলিশ চ্যানেল পেরিয়ে ভিসা ছাড়াই যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করার চেষ্টা করে থাকে। এই নৌকাগুলোকে ব্রিটেনের উপকূলে ভেড়ার আগেই আটকে দেওয়া হবে, যেটাকে বলা হয় ‘স্টপ দ্য বোটস’। দুই প্রধান দলেরই প্রতিশ্রুতিতে এটা অন্তর্ভুক্ত ছিল।
অভিবাসন ইস্যুতে ঋষি সুনাক সরকারের সবচেয়ে কঠোর ও বিতর্কিত পদক্ষেপ ছিল ‘রুয়ান্ডা নীতি’ ঘোষণা। এর আওতায় অবৈধ অভিবাসীদের ব্রিটেনে না রেখে সোজা আফ্রিকার দেশ রুয়ান্ডায় পাঠিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছিল।
লেবারের নির্বাচনী ইশতেহারে পরিষ্কার বলা হয়েছে, তারা ক্ষমতায় এলে রুয়ান্ডা পরিকল্পনা পুরোপুরি বাতিল করা হবে। সুতরাং, সে ক্ষেত্রে অবৈধ অভিবাসীদের নিয়ে কোনো বিমান রুয়ান্ডার উদ্দেশে রওনা দেবে না।
লেবারের ইশতেহারে বলা হয়েছে, নিরাপদ দেশ থেকে আসা যেসব লোকের যুক্তরাজ্যে থাকার অধিকার নেই, তাদের ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া ‘ফাস্ট ট্র্যাক’ বা ত্বরান্বিত করা হবে।