যুক্তরাজ্য খেলাফত মজলিসের প্রেস ব্রিফিং : শাপলা চত্ত্বর গণহত্যার বিচারসহ আওয়ামী সরকারের ১৬ বছরের দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবী
প্রকাশিত হয়েছে : ০৭ আগস্ট ২০২৪
দেশ ডেস্ক, ৭ আগস্ট ২০২৪ : বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে খেলাফত মজলিস যুক্তরাজ্য শাখা আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে অবিলম্বে ছয় মাস মেয়াদী অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠন, অতি দ্রুত অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজন, ২০১৩ সালের শাপলা চত্বর গণহত্যাসহ সকল হত্যাকাণ্ডের বিচারের উদ্যোগ গ্রহণ ও আওয়ামী সরকারের গত ১৬ বছরের সকল দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবী জানানো হয়েছে ।
৭ আগস্ট বুধবার পূর্ব লন্ডনের একটি রেস্টুরেন্টে অনুষ্ঠিত প্রেস ব্রিফিংয়ে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের যুক্তরাজ্য শাখার সেক্রেটারি মুফতী ছালেহ আহমদ । উপস্থিত সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মাওলানা ফয়েজ আহমদ এবং কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য ও যুক্তরাজ্য শাখার সহ সভাপতি আলহাজ্ব মাওলানা আতাউর রহমান।
এসময় দলীয় নেতৃবৃন্দের মধ্য উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাজ্য সহ সভাপতি মাওলানা মুহাম্মদ শাহনূর মিয়া, মাওলানা নাজিম উদ্দীন, সহসাধারণ সম্পাদক মাওলানা মিসবাহুজ্জামান হেলালী, সাংগঠনিক সম্পাদক হাফিজ মন্জুরুল হক, ইসলামী ছাত্র মজলিসের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা তারেক আল হাবীব, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস লন্ডন মহানগর শাখার ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হাফিজ মাওলানা লিয়াকত হোসাইন, মাওলানা মহবুবুল আলম, হাফিজ মাওলানা আহবাবুর রহমান,আলহাজ্ব মুহাম্মদ শাহজাহান সিরাজ প্রমূখ।
প্রেস ব্রিফিং এর লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে দেশের ছাত্রসমাজ কোটা ব্যবস্থা সংস্কার দাবিতে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরু করে ।শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক এ দাবিকে কেন্দ্র করে সারা দেশে একটি শান্তিপূর্ণ আন্দোলন গড়ে ওঠে। দেশবাসী সকলেই স্বীকার করেছেন ছাত্র সমাজের দাবিসমূহ যৌক্তিক এবং ন্যায় সঙ্গত ছিল । শান্তিপূর্ণ এই আন্দোলনে আওয়ামী সরকারের দায়িত্বশীলদের উস্কানিতে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের দলীয় ক্যাডারদের ছোড়া গুলিতে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র, মায়ের কোলের শিশু সহ বহু সাধারণ মানুষ নিহত হয়েছেন ।রক্তাক্ত হয়েছে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পবিত্র ক্যাম্পাসগুলো । আহত হয়েছেন হাজার ছাত্র-জনতা । সকল জুলুম নির্যাতন ও হামলা মামলা বরদাস্ত করে ছাত্র-জনতা তাদের ন্যায্য অধিকারের আন্দোলন সংগ্রাম অব্যাহত রাখে । ছাত্র-জনতার এই আন্দোলনকে সমর্থন করে দেশের সর্বস্তরের জনগণের দীর্ঘদিনের পুঞ্জিভূত ক্ষোভ থেকেই স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাস্তায় নেমে আসে । ছাত্র-জনতার গণঅভ্যূত্থানে বাধ্য হয়ে জনরোষ থেকে বাঁচতে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে গত ৫ আগষ্ট দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান । অবসান ঘটে দীর্ঘ স্বৈরশাসনের।ফ্যাসিবাদের হাত থেকে মুক্তি পায় দেশের মাটি ও মানুষ।
দেশকে জালেম স্বৈরশাসনের হাত থেকে বাঁচাতে আন্দোলন করতে গিয়ে যারা জীবন দিয়েছেন তাদের কে গভীর শ্রদ্ধা ও ভালবাসার সাথে স্মরণ করছি ।মহান আল্লাহর রাব্বুল আলামীনের কাছে দোয়া করি তিনি যেন তাদেরকে শহীদ হিসেবে কবুল করেন। যারা বিভিন্ন ভাবে ত্যাগ কুরবানি স্বীকার করেছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞা প্রকাশ করছি । মহান আল্লাহ তাদের উত্তম বিনিময় দান করুন। যারা আহত হয়ে চিকিৎসাধীন আছেন তাদেরকে মহান আল্লাহ অতি দ্রুত পরিপূর্ণ সুস্থতা দান করুন । মহান আল্লাহ পাক খাস রহমত দিয়ে জালেমকে পরাজিত করে মজলুমদেরকে বিজয় দান করেছেন। এই জন্য আমরা মহান আল্লাহ তাআলার শুকরিয়া আদায় করছি । দীর্ঘ আন্দা
লোন সংগ্রাম, ছাত্রজনতার বহু প্রাণ উৎসর্গ ও আলেম উলামাদের জেল জুলুমের বিনিময়ে অর্জিত এই বিজয় লগ্নে আমরা ছাত্রজনতা ও দেশবাসীকে সংগ্রামী অভিনন্দন জানাই।
অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, দুর্বৃত্তরা বিজয়কে ভিন্ন দিকে নিয়ে যেতে শহর-বন্দর-গ্রামে নাশকতা শুরু করেছে । সরকারি স্থাপনা, মানুষের বাড়ি-ঘর হামলা করে ভাঙচুর ও লুটপাট করছে এবং বিভিন্ন স্থানে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে ।আমরা বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের পক্ষ থেকে এর তীব্র নিন্দা জানাই। কোনও বিবেকসম্পন্ন মানুষ এই খারাপ ও গর্হিত কাজগুলো করতে পারে না।লুটতরাজ বন্ধ এবং সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমাদের সংগঠনের সর্বস্তরের জনশক্তি মাঠে কাজ করছে । মাদ্রাসার ছাত্ররা সহ ছাত্র-জনতা পাহারা দিচ্ছে সরকারী ভবন সহ বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের উপাসনালয় ।দেশের সকল ধর্মাবলম্বী মানুষের জান ও মাল রক্ষায় পাহারাদারের ভূমিকা পালন করছে তারা । যা অত্যন্ত প্রশংসার দাবী রাখে ।আমরা তাদের ধন্যবাদ জানাই।
আবারো আপনাদের মাধ্যমে দেশের জনগণ কে উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি আপনারা যেখানেই দুর্বৃত্তপনা দেখবেন, কঠোর হস্তে দমন করবেন ।অন্যায়কারীদের হাত টেনে ধরবেন । দেশের ছাত্র-জনতার ও প্রশাসন যদি ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করি তা হলে দুর্বৃত্তপনা বন্ধ করা অবশ্যই সম্ভব। যারা এই নাশকতা ও দুর্বৃত্তপনার সাথে জড়িত তাদেরকে অবশ্যই অবিলম্বে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
এই দেশটা আমাদের । দেশ আমাদেরকেই গড়তে হবে। আমাদের প্রবাসী ভাইয়েরা তাদের মনের বিভিন্ন ক্ষোভ থেকে দেশে রেমিট্যান্স পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছেন। রেমিট্যান্স পাঠানো সহ দেশের অস্তিত্ব বাঁচাতে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করা সময়ের দাবী । ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অর্জিত এ বিজয় আমাদের নতুন সম্ভাবনা নিয়ে এসেছে ।আসুন, প্রবাসী ও দেশবাসী সহ সবাই মিলে বিধ্বস্ত দেশটাকে একযোগে সহযোগিতা করে গড়ে তুলি এবং প্রবাসী সচেতন নাগরিক হিসেবে আমাদের দায়িত্ব পালন করি।
লিখিত বক্তব্যে আরো বলা হয়, অনতিবিলম্বে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় সকল রাজনৈতিক দল, পেশাজীবী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিদের সাথে পরামর্শক্রমে ৬ মাসের মেয়াদ দিয়ে অন্তবর্তীকালীন একটি সরকার গঠন করা।অন্তবর্তীকালীন. সরকারে উলামায়ে কেরামদের মধ্য থেকে গ্রহনযোগ্য একজন প্রতিনিধি অবশ্যই নিশ্চিত করা ।অতিদ্রুত অবাধ, সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক একটি অর্থবহ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে সত্যিকার জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার করা।
গ্রহনযোগ্য তদন্ত কমিশন গঠন করে ২০১৩ সালে শাপলা চত্বরসহ সকল গণহত্যাকান্ডের বিচার করতে হবে । একই সাথে গত ১৬ বছরে সংঘটিত সকল রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক হত্যাযজ্ঞ, গণহত্যা, গুম ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিচার করতে হবে । তদন্ত সাপেক্ষে নিহত-আহত পরিবারকে ক্ষতিপূরণসহ ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। এক্ষেত্রে যে সকল ব্যক্তি বা সংগঠন জড়িত তাদের বিচার করতে হবে।
গত ১৬ বছরের দুর্নীতিবাজ ও বিদেশে অর্থ পাচারকারীদের সকল সম্পত্তি ক্রোক করতে হবে এবং রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা করতে হবে । বিদেশে পাচারকৃত অবৈধ অর্থ দেশে ফেরত নেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে । বিগত ১৬ বছরে সকল দুর্নীতি শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে হবে।আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনের কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিজেদের শপথ লঙ্ঘন করে অন্যায় কাজ কর্ম যারা করেছে তাদেরকে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।
আলেম ওলামাসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের ওপর দায়ের করা ষড়যন্ত্রমূলক সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও সকল রাজবন্দিদের মুক্তি দিতে হবে।