বাংলাদেশে সংঘটিত গণহত্যার বিচারসহ ১০দফা দাবিতে যুক্তরাজ্য এবি পার্টির সংবাদ সম্মেলন
প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ আগস্ট ২০২৪
বাংলাদেশে সংঘটিত সাম্প্রতিক গণহত্যার বিচার ও রাষ্ট্রসংস্কারসহ ১০ দফা দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে আমার বাংলাদেশ (এবি পার্টি) যুক্তরাজ্য শাখা। গত ১৩ আগস্ট মঙ্গলবার লন্ডন-বাংলা প্রেসক্লাব আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবিগুলো তুলে ধরা হয়। একই সাথে বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকার সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে বাংলাদেশে কাঙ্খিত পরিবর্তন আনতে সক্ষম হবে এবং একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে বলেও এবি পার্টির নেতৃবন্দরা আশা প্রকাশ করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সাধারণ সম্পাদক বিশিষ্ট আইনজীবী নুরুল গাফফার। এবি পার্টি যুক্তরাজ্য শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুজাহিদুল ইসলামের সঞ্চালনায় এতে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের যুক্তরাজ্য আহবায়ক হারুনুর রশীদ, যুগ্ম আহবায়ক ব্যারিস্টার খান আযম, যুগ্ম আহবায়ক আবদুল মুমিত যুরু, সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান ও সাংগঠনিক সম্পাদক আইনজীবী মুনসাত চৌধুরী।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, জুলাই ও আগস্টের প্রথম সপ্তাহে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ এক ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণ অতিক্রম করেছে। শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও হাসিনা সরকারের দলীয় সন্ত্রাসীরা হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে চার বছর বয়সী শিশুসহ সহস্রাধিক ছাত্র-জনতার রক্তে রাজপথ রঞ্জিত করছে। ছাত্ৰ-জনতা চরম আত্মত্যাগের মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে পদত্যাগে বাধ্য করেছে এবং তিনি দেশকে এক ভয়াবহ সংকটের মধ্যে ফেলে দিয়ে পালিয়ে গেছেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে ঘোষনা দিয়ে নৃশংসভাবে এতোবেশি সাধারণ ছাত্র-জনতাকে হত্যা করার কোনো অতীত নজির নেই। অনেক ছাত্র ও সাধারণ মানুষের অঙ্গহানি তথা চোখ, কান, হাত, পা হারিয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করেছে, বিকলাঙ্গ হয়েছে। এই হত্যাযজ্ঞে নিহতদের প্রায় ৮৭% লোক কোনো রাজনৈতিক পরিচয় বহন করে না, অর্থাৎ কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত নয়। আমরা মনে করি বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় মদদে, রাষ্ট্রীয় বাহিনী ও সহযোগী বাহিনী কর্তৃক এই হত্যাযজ্ঞ মানবতা বিরোধী অপরাধ যা আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে বিচারযোগ্য। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন সমূহ যেমন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, এশিয়ান হিউমান রাইটস কমিশন এবং জাতিসংঘ ইতোমধ্যে এই অপরাধ সংগঠিত হওয়ার সুনির্দিষ্ট তথ্য-উপাত্ত ও প্রমান পাওয়ার কথা নিশ্চিত করেছে।
অন্তবর্তীকালীন সরকারের সামনে আজ বহুমাত্রিক চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে বলা হয়, ভঙ্গুর ও বিধ্বস্থ রাষ্ট্র ব্যবস্থা সংস্কারের অঙ্গীকার এবং যতদ্রুত সম্ভব সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। এর জন্য নি:সন্দেহে একটা যৌক্তিক সময় প্রয়োজন। সে সময় যথাযথভাবে কাজে না লাগালে বা বিনা কারণে অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ প্রলম্বিত হলে জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা নষ্ট হবার ঝুঁকি তৈরী হয়। আশাকরি সেদিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সচেতন থাকবেন।
সংবাদ সম্মেলনে অন্তবর্কীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নিকট ১০ দফা দাবি জানানো হয়। দাবিগুলো হচ্ছে- ১ ) দেশ গঠনের মহা চ্যালেঞ্জ এখন ছাত্র-জনতার কাঁধে; এই চ্যালেঞ্জে ধৈর্য, সহনশীলতা, ত্যাগ, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও মানবাধিকার সুরক্ষার অঙ্গীকার নিয়ে আসুন একযোগে কাজ করতে হবে। ২ ) ছাত্র-জনতার অসীম আত্মত্যাগ ও রক্তদানে যে বিজয়; তা ধরে রাখতে হবে। না পারলে শহীদেরা আমাদের ক্ষমা করবেনা। ব্যর্থতার জন্য অদূর ভবিষ্যতে শাসকদের পরিণতিও হতে পারে আওয়ামীলীগের অনুরূপ হবে। ৩ ) ভারতীয় বিশেষ কিছু গণমাধ্যম ও রাজনৈতিক পক্ষ বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে যে অপপ্রচার চালাচ্ছে তা বন্ধের ব্যবস্থা নিতে হবে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে মিথ্যা প্রপাগান্ডা ও সাম্প্রদায়িক উস্কানি সৃষ্টির অপচেষ্টা যে বন্ধুত্বের লক্ষণ নয় তা ভারত সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে দিতে হবে। ৪ ) মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খৃস্টানসহ সকল ধর্মের আমরা সবাই বাংলাদেশী-বাঙালী। কেউ সংখ্যাগুরু বা সংখ্যালঘু নই। এখানে কোনো বৈষম্য বা পৃথক স্বত্ত্বাগত বিভাজনের সুযোগ নেই। জীবন দিয়ে হলেও আমাদের সবাইকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বন্ধন রক্ষা করতে হবে। সকল ধর্মের অনুসারীদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করুন। একটি নিরপেক্ষ বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠন করে সকল ধরনের সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা তদন্ত ও এর সাথে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। ৫ ) শেখ হাসিনা ও তার দোসররেরা অবৈধ ক্ষমতার গদি টিকিয়ে রাখতে গিয়ে যে গণহত্যা, ধ্বংসযজ্ঞ ও নৃশংসতা চালিয়েছে অবিলম্বে জাতিসংঘের অধীনে তার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার প্রকৃয়া শুরু করতে হবে। ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিটি ব্যক্তি ও পরিবারের ক্ষতিপূরণের দায়িত্ব রাষ্ট্রকে নিতে হবে। ৬ ) গণঅভ্যুত্থানের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় যত ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তার পুরো দায় শেখ হাসিনা ও তার আগ্রাসী খুনী-দোসরদের। কিন্তু অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর যে কোনো প্রতিহিংসামূলক কর্মকান্ডের দায় বর্তমান সরকার ও আন্দোলনকারী সকল পক্ষের উপর বর্তাবে। তাই, অবিলম্বে সরকার ও ছাত্র-জনতার সম্মিলিত সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে সর্বাত্মক জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। ৭ ) পদস্থ যে কোন কাউকে অপসারণ বা তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের মূলনীতি হতে হবে তার দ্বারা কৃত অপরাধ ও অন্যায্য, অন্যায়মূলক ভূমিকা। পক্ষান্তরে নতুন যে কোন নিয়োগ বা পদায়নের ভিত্তি হতে হবে মেধা, দক্ষতা, সততা, পূর্ববর্তী অবৈধ সরকার দ্বারা বঞ্চিত ও অবহেলিত হওয়া এবং বিগত গণতান্ত্রিক সংগ্রামে তার অবদান ও ভূমিকা। ৮ ) বিচার বিভাগ, পুলিশ প্রশাসন, নির্বাচন কমিশনসহ ভঙ্গুর ও বিধ্বস্থ রাষ্ট্র ব্যবস্থার সংষ্কারের মাধ্যমে স্বাধীন ও জনবান্ধব প্রাশাসনিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে উদ্যোগ গ্রহণ। নির্বাচন ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তণ এনে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ভিত্তিতে নির্বাচন ব্যবস্থা চালু করতে হবে। ৯ ) গণতন্ত্র ও মানবাধিকার সুরক্ষায় নিয়োজিত দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সকল পক্ষ এবং উন্নয়ণ সহযোগিদের প্রতি আহ্বান বাংলাদেশের ছাত্র-গণ অভ্যুত্থানকে সফল করতে সর্বাত্মক সহযোগিতা দিন। ১০ ) দ্রব্যমূল্য কমিয়ে জনগণের ক্রয় ক্ষমতা সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনা, সকল পর্যায়ের কল-কারখানা সচল রাখা, ব্যবসা বানিজ্যে গতি সঞ্চালনসহ দেশের অর্থনীতিতে নতুন করে সংস্কার ও উদ্যম ফিরিয়ে আনতে সকলের সমন্বিত প্রয়াস জোরদার করতে হবে।