গ্লোবাল সাউথ সম্মেলনে ড. ইউনূস : অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ
প্রকাশিত হয়েছে : ১৮ আগস্ট ২০২৪
দেশ ডেস্ক:: অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার অন্তর্ভুক্তিমূলক, বহুত্ববাদী গণতন্ত্রে উত্তরণ এবং একটি পরিবেশ তৈরি করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। যার মাধ্যমে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে।
গতকাল শনিবার ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত ‘থার্ড ভয়েস অব গ্লোবাল সাউথ সামিট’-এর ইনঅগারাল লিডার্স অধিবেশনে এ কথা বলেন তিনি। ড. ইউনূস ঢাকা থেকে ভার্চুয়ালি সম্মেলনে যুক্ত হন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে শপথ নেওয়ার পর এটিই তাঁর প্রথম বহুপক্ষীয় কোনো অনুষ্ঠানে যোগদান।
তৃতীয়বারের মতো গ্লোবাল সাউথ সম্মেলনের আয়োজন করেছে ভারত। এবারের সম্মেলনে রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধানদের নিয়ে উদ্বোধনী অধিবেশনের প্রতিপাদ্য এবং মূল সম্মেলনের প্রতিপাদ্য হলো ‘অ্যান এমপাওয়ারড গ্লোবাল সাউথ ফর এ সাসটেইনেবল ফিউচার’। রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধান পর্যায়ে অনুষ্ঠিত উদ্বোধনী অধিবেশনটি সঞ্চালনা করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। খবর বাসসের।
সম্মেলনে টেকসই ভবিষ্যৎ বিনির্মাণ ও নতুন বিশ্ব গড়ে তুলতে গ্লোবাল সাউথের কৌশলের কেন্দ্রবিন্দুতে তরুণ ও ছাত্রদের রাখার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, তরুণরা নতুন বিশ্ব গড়ে তুলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমাদের কৌশলগুলোর কেন্দ্রবিন্দুতে অবশ্যই তরুণ ও ছাত্রদের রাখতে হবে, যারা গ্লোবাল সাউথের জনসংখ্যার উল্লেখযোগ্য অংশ। আমাদের জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশ তরুণ এবং তারা সমাজের সবচেয়ে শক্তিশালী অংশ।
আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকা, এশিয়া ও ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের দেশ গ্লোবাল সাউথের অন্তর্ভুক্ত। মূলত এসব দেশে মাথাপিছু আয় উন্নত দেশের তুলনায় কম।
প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশের তরুণদের প্রশংসা করে বলেন, বীর ছাত্রদের নেতৃত্বে বাংলাদেশে গত ৫ আগস্ট দ্বিতীয় বিপ্লব সংঘটিত হয়েছে। আর জনগণের যোগদানের মাধ্যমে এই বিপ্লব গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয়। যার ফলে ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শপথ গ্রহণ করে।
তিনি আরও বলেন, বৈপ্লবিক পরিবর্তনের লক্ষ্য নিয়ে তরুণরা আন্দোলন করেছে এবং তাদের আকাঙ্ক্ষা দেশবাসীকে প্রভাবিত করেছে। এখন গণতন্ত্র ও মানবাধিকার নিশ্চিত করতে অর্থবহ সংস্কার জরুরি। যার মাধ্যমে ভঙ্গুর হয়ে পড়া রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠানকে পুনরুদ্ধার করা হবে।
গণঅভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশে নানা পরিবর্তন ঘটছে উল্লেখ করে ড. ইউনূস গ্লোবাল সাউথের নেতৃবৃন্দকে ঢাকা সফরের আমন্ত্রণ জানিয়ে বলেন, তরুণ ছাত্র এবং ১২ থেকে ১৩ বছর বয়সী শিশুরা ৪০০ বছরের শহরের দেয়ালে একটি নতুন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের ছবি আঁকছে। এর জন্য কোনো সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা বা নির্দেশনা তাদের নেই। কারোর পক্ষ থেকে বাজেট সমর্থনও নেই। এটি দ্বিতীয় বিপ্লবের আকাঙ্ক্ষার প্রতি তাদের আবেগ ও অঙ্গীকারের বহিঃপ্রকাশ মাত্র।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের তরুণদের দেয়ালের লেখা পড়ে যে কেউ বুঝবেন, তারা কী স্বপ্ন দেখছে। তরুণদের স্বপ্ন পূরণ করাই আমাদের প্রধান কাজ।
নোবেল বিজয়ী এ অর্থনীতিবিদ বলেন, বিশ্বব্যাপী তরুণরা আলাদা, তারা সক্ষম এবং প্রযুক্তিগতভাবে আগের প্রজন্মের তুলনায় অনেক এগিয়ে। তারা সব অসম্ভবকে সম্ভব করতে পারে। তারা উদ্যোক্তা। কিন্তু তারা চাকরি চায়। কারণ দেশে দেশে এমন একটি শিক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে, যা তাদের চাকরির জন্য প্রস্তুত করে। অথচ সব মানুষের মধ্যে সৃজনশীলতা রয়েছে। কেবল চাকরিপ্রার্থী তৈরি করে এমন শিক্ষা ও আর্থিক ব্যবস্থা নতুনভাবে ঢেলে সাজানোর আহ্বান জানান তিনি।