সিলেটে দুই হত্যা মামলা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, উপাচার্য, মেয়র, পুলিশ ও সাবেক ৩ এমপি আসামি
প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ আগস্ট ২০২৪
দেশ ডেস্ক:: সিলেটে ছাত্র আন্দোলন চলাকালে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) শিক্ষার্থী রুদ্র সেন এবং সাংবাদিক এ টি এম তুরাব নিহতের ঘটনায় পৃথক দুটি হত্যা মামলা হয়েছে। সোমবার দুপুরে সিলেটের অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট আবদুল মোমেনের আদালতে মামলা দুটি দায়ের করা হয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সহসমন্বয়ক ও শাবিপ্রবির শিক্ষার্থী ফয়সাল হোসেন প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, রুদ্র সেন হত্যার ঘটনায় মামলা করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শাবিপ্রবির সমন্বয়ক হাফিজুল ইসলাম। অন্যদিকে সাংবাদিক আবু তাহের মো. তুরাব (এ টি এম তুরাব) হত্যার ঘটনায় মামলাটি করেছেন তাঁর ভাই আবুল আহছান মো. আযরফ (জাবুর)। দুটি মামলায়ই সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানকে আসামি করা হয়েছে।
রুদ্র হত্যা মামলায় সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, আওয়ামী লীগের সাবেক তিন সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান, শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল ও রণজিৎ সরকার, শাবিপ্রবির সদ্য পদত্যাগী উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ ও সহ–উপাচার্য মো. কবীর হোসেন, সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর আজাদুর রহমান, জগদীশ চন্দ্র দাস ও রুহেল আহমদও আসামি হিসেবে আছেন।
এ মামলার প্রথম চার আসামিই পুলিশ সদস্য। তাঁরা হলেন সিলেট মহানগর পুলিশের সদ্য বদলি করা উপকমিশনার (উত্তর) মো. আজবাহার আলী শেখ, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. সাদেক দস্তগীর কাউছার, জালালাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মিজানুর রহমান এবং ওসি (তদন্ত) আবু খালেদ মো. মামুন।
মামলার অন্য আসামির মধ্যে রয়েছেন শাবিপ্রবির প্রক্টর মো. কামরুজ্জামান চৌধুরী, মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিধান কুমার সাহা, স্বেচ্ছাসেবক লীগ সিলেট মহানগরের সভাপতি আফতাব হোসেন খান, যুবলীগ সিলেট মহানগরের সভাপতি আলম খান (মুক্তি), ছাত্রলীগ সিলেট জেলার সভাপতি নাজমুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক রাহেল সিরাজ, সিলেট মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি কিশওয়ার জাহান (সৌরভ) ও সাধারণ সম্পাদক নাইম আহমদ, শাবিপ্রবি ছাত্রলীগের সভাপতি খলিলুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক সজিবুর রহমান প্রমুখ।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, রুদ্র সেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন। গত ১৮ জুলাই কেন্দ্রঘোষিত অবস্থান কর্মসূচি ছিল। সেদিন শাবিপ্রবির প্রধান ফটকের পাশে সুরমা আবাসিক এলাকায় পুলিশ ও উচ্ছৃঙ্খল জনতা পরিকল্পিতভাবে সরকারি অস্ত্র, অবৈধ বন্দুক, রাইফেল, দা ও লাঠিসোঁটা নিয়ে শান্তিপ্রিয় ছাত্র-জনতাকে আক্রমণ করে। এতে অনেকে শারীরিকভাবে গুরুতর আহত হন। অস্ত্রধারীরা হত্যার উদ্দেশ্যে গুলিও ছোড়ে। অনেকে গুলিবিদ্ধ হন। ঘটনার একপর্যায়ে আসামিদের ধাওয়া খেয়ে আহত অবস্থায় রুদ্র সেন সুরমা আবাসিক এলাকা ও বাগবাড়ী এতিম স্কুলের রাস্তার সংযোগস্থলে একটি খালে পড়ে যান। তাঁর সাঁতার না জানার বিষয়টি জেনেই আসামিরা পরিকল্পিতভাবে রুদ্রকে খালে ফেলে মৃত্যু নিশ্চিত করেন।
এদিকে দৈনিক নয়াদিগন্ত পত্রিকার সিলেট প্রতিনিধি ও স্থানীয় দৈনিক জালালাবাদ পত্রিকার নিজস্ব প্রতিবেদক আবু তাহের মো. তুরাব হত্যা মামলায় সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. সাদেক দস্তগীর কাউছার, সদ্য বদলি করা উপকমিশনার (উত্তর) মো. আজবাহার আলী শেখ, সিলেট কোতোয়ালি মডেল থানার সহকারী পুলিশ কমিশনার মিজানুর রহমান, বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ কল্লোল গোস্বামী, কোতোয়ালি থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মঈন উদ্দিন, পরিদর্শক (তদন্ত) ফজলুর রহমানকে আসামি করা হয়েছে।
এ ছাড়া অন্য আসামিদের মধ্যে মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আফতাব উদ্দিন খান, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি পীযূষ কান্তি দে, সিলেট সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা সাজলু লস্কর, সিলেট সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ও ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রুহেল আহমদ, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সজল দাস (অনীক) প্রমুখ। এ মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও ২০০ থেকে ২৫০ জনকে আসামি রাখা হয়েছে।
তুরাব হত্যা মামলার এজাহারে বলা হয়, গত ১৯ জুলাই দুপুর ২টার দিকে তুরাব নগরের মধুবন সুপারমার্কেটের সামনে অন্য সাংবাদিকদের সঙ্গে পেশাগত দায়িত্ব পালন করছিলেন। এ সময় আসামিরা টার্গেট করে শত শত গুলি ছুড়ে তুরাবকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেন।