সাড়ে ১৮ লাখ কোটি টাকা ঋণ রেখে গেছে আওয়ামী লীগ সরকার
প্রকাশিত হয়েছে : ২০ আগস্ট ২০২৪
দেশ ডেস্ক:: গত ১৫ বছরে বিভিন্ন উৎস থেকে ব্যাপক ঋণ নিয়েছে সদ্য ক্ষমতা হারানো আওয়ামী লীগ সরকার। যার বড় অংশই নেয়া হয়েছে দেশি উৎস থেকে। এর মধ্যে বেশি ঋণ নেয়া হয়েছে দেশের ব্যাংকব্যবস্থা থেকে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ সূত্রে পাওয়া তথ্য বলছে, পদত্যাগের সময় শেখ হাসিনার সরকার ঋণ রেখে গেছে ১৮ লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকা। যা পরিশোধের জন্য এখন ব্যবস্থা নিতে হবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে।
গত ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশি-বিদেশি ঋণের আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে অর্থ বিভাগ। তাতে মোট ঋণের স্থিতি দেখানো হয়েছে ১৬ লাখ ৫৯ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা। ঋণের হিসাব হালনাগাদ করা হয় তিন মাস পরপর। মার্চ ও জুনের হিসাব আরো কিছুদিন পর তৈরি করা হবে।
অর্থ বিভাগ ধারণা করছে, চলতি বছরের জুন শেষে দেশি-বিদেশি ঋণ স্থিতি দাঁড়াবে ১৮ লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকার মতো। এর মধ্যে দেশি অংশ হবে ১০ লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকা আর বিদেশি অংশ ৮ লাখ ১ হাজার কোটি টাকা।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) তথ্য অনুযায়ী, জুন মাস শেষে বিদেশি ঋণের পরিমাণ ছিল ৬ হাজার ৭৯০ কোটি মার্কিন ডলার। প্রতি ডলার ১১৮ টাকা দরে হিসাব করলে তা ৮ লাখ ১ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়ায়। গত ডিসেম্বর শেষে বিদেশি ঋণের স্থিতি ছিল ৪ লাখ ৫ হাজার ৫২০ কোটি টাকা।
গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ঋণের যে স্থিতি ছিল, তা দেশের তিনটি বাজেটের মোট অর্থ বরাদ্দের সমান। এর মধ্যে ৯ লাখ ৫৩ হাজার ৮১৪ কোটি টাকার দেশি ঋণের মধ্যে শুধু ব্যাংকব্যবস্থা থেকে নেয়া ঋণের স্থিতিই ছিল ৫ লাখ ২৫ হাজার ৪৪৭ কোটি টাকা। বাকি ঋণ নেয়া হয়েছে ট্রেজারি বিল ও বন্ডের বিপরীতে। এ ছাড়া সঞ্চয়পত্র ও সাধারণ ভবিষ্যৎ তহবিলের বিপরীতেও আছে বড় অঙ্কের ঋণ।
অর্থ বিভাগের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১৭ সালের ডিসেম্বরেও দেশি ঋণের স্থিতি ছিল ৩ লাখ ২০ হাজার ২৭২ কোটি টাকা। ক্ষমতায় তখন আওয়ামী লীগই ছিল। কিন্তু ছয় বছরের ব্যবধানে এ ঋণ বেড়ে প্রায় তিন গুণ হয়।
২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি যখন আওয়ামী লীগ সরকারের দায়িত্ব নেয়, তখন দেশি-বিদেশি ঋণের স্থিতি ছিল ২ লাখ ৭৬ হাজার ৮৩০ কোটি টাকা। ঐ সময় দেশি ঋণের চেয়ে বিদেশি ঋণের স্থিতি বেশি ছিল। কিন্তু মাত্রই বিদায় নেয়া সরকারের শেষ দিকে এসে তা উল্টে যায়। এ সময়ে অবশ্য মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) আকারও বাড়ে।
বিশ্লেষকদের মতে—সাবেক সরকারের যথাযথ ঋণ ব্যবস্থাপনা না থাকায় দেশি উৎস থেকে বেশি পরিমাণে ঋণ নেয়া হয়েছে। যদিও বৈদেশিক মুদ্রায় বিদেশি ঋণ নেয়াকে সব সময় স্বাগত জানান অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞরা। গত ১৫ বছরে অনেক বিদেশি ঋণও নেয়া হয়েছে। তবে এসব ঋণের বেশির ভাগই নেয়া হয়েছে দর–কষাকষি ও বাছবিচারহীনভাবে; যা সরকারের দায়দেনা পরিস্থিতিতে চাপ বাড়িয়েছে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ঘাড়ে চাপ
দেশের অবকাঠামো খাতে উন্নয়নের কথা বললেও বিপুল পরিমাণ বিদেশি ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে কয়েক বছর ধরেই চাপে ছিল আওয়ামী লীগের সরকার। এ চাপ শুরু হয় এমন সময়ে, যখন দেশে দীর্ঘদিন ধরে বৈদেশিক মুদ্রার সংকট চলছে। বিদেশি ঋণ পরিশোধের জন্য অতিরিক্ত অর্থ ব্যয়ের কারণে রিজার্ভের পাশাপাশি বাজেটেও বাড়তি চাপ তৈরি হয়েছে।
নতুন সরকার দায়িত্বে এসে অবশ্য বিদেশি ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে কর্মকর্তাদের সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছে। এ নিয়ে গত বুধবার ইআরডি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। বৈঠকে তিনি বিদেশি ঋণ নেয়ার সময় সুদের হার, কিস্তি, পরিশোধের মেয়াদসহ বিভিন্ন শর্ত যাচাই–বাছাই করার নির্দেশ দেন।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশকে অর্থ দিতে সবাই আগ্রহী। ইআরডি কর্মকর্তাদের বলেছি যে তা যেন যাচাই–বাছাই করে নেয়া হয়। কারণ, ঢালাও ঋণ নিয়ে আফ্রিকার অনেক দেশের করুণ পরিণতি আমরা দেখেছি।