লন্ডনে প্রবাসী মুসলিম নেটওয়ার্কের উদ্যোগে পাবলিক সেমিনার অনুষ্ঠিত
প্রকাশিত হয়েছে : ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪
লন্ডনে প্রবাসী মুসলিম নেটওয়ার্কের উদ্যোগে পাবলিক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। ‘একটি স্বনির্ভর নতুন বাংলাদেশের রূপরেখ’ শিরোনামে গত ২৭ আগস্ট মঙ্গলবার, পূর্ব লন্ডনের একটি রেস্টুরেন্টে এই সেমিনারের আয়োজন করা হয়।
সেমিনারে বাংলাদেশে গত ১৫ বছর ধরে চলমান অত্যাচারী শাসনের বিরুদ্ধে জনগণের সংগ্রামের ইতিহাস ও ভবিষ্যত বাংলাদেশের রূপরেখা কি রকম হওয়া উচিত তা তুলে ধরা হয়। এই সেমিনারে বক্তা হিসেবে ছিলেন লন্ডনের সুপরিচিত খতিব লিয়াকত সরকার ও বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্ট বারের সদস্য ও ইসলামি রাজনৈতিক চিন্তাবিদ ব্যারিস্টার রেজাউল করিম। সেমিনারে সভাপতিত্বে ছিলেন মুহাম্মদ নাহেন।
খতিব লিয়াকত সরকার দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলেন, বাংলাদেশে অপশাসনের এই চক্র থেকে মুক্তির একমাত্র উপায় ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থা তথা খিলাফাহ। তিনি বিগত সময়ে যালিম হাসিনা সরকারের অধীনে মানবতা-বিরোধী অপরাধ এবং গণহত্যার শিকার হওয়া অসংখ্য নিরীহ মানুষের অবস্থা তুলে ধরেন এবং ৫০ বছরের অধিক সময়ের পরও একটি স্বনির্ভর বাংলাদেশ গঠন করতে না পারার কারণ হিসেবে সেক্যুলার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে চিহ্নিত করেন। এই জুলুমের চক্র থেকে বের হয়ে আসতে কি রকম বাংলাদেশ গঠন করা প্রয়োজন তা সবিস্তারে আলাপ করেন। তিনি বলেন, গত ১৫ বছরের স্বৈরাচারী শাসনামলে বিভিন্ন দলের নেতাকর্মী এবং সাধারণ মানুষের ওপর যে অবর্ণনীয় নির্যাতন এবং হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়েছে, তার সুবিচার নিশ্চিত করার জন্য জনগণের পক্ষ থেকে জোরালো দাবি উঠেছে। জনগণের দাবি এই যে, হাসিনা কর্তৃক সংঘটিত সকল অপরাধের জন্য হাসিনা এবং তার দোসরদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হোক এবং তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হোক। সেক্যুলার গণতান্ত্রিক কোন সরকার দেশের মানুষের জন্য সুশাসন নিশ্চিত করতে পারেনি। বরং মানুষের উপর অপশাসন, দুর্নীতি, লুটপাটের মহোৎসব চাপিয়ে দিয়েছে। এই গণউত্থানকে সফল করতে মুসলিম হিসেবে আমাদের কর্তব্য হবে ব্যক্তিগত থেকে রাষ্ট্রীয় সর্বক্ষেত্রে ইসলামের প্রতিফলন ঘটানো। তিনি আরো যুক্ত করেন, এই স্বৈরাচারী শাসক মুসলিমদের কোণঠাসা করে রেখেছিল। অতএব এখনই সময় আমাদের লক্ষ্য স্থির করা। আমরা যেন মুসলিমদের সঠিক নেতৃত্ব দিতে পারি। কেবল বাংলাদেশই নয়, আমাদের পদচারণা হতে হবে সমগ্র বিশ্বে।মুসলিম হিসেবে আমাদের সকল সামর্থ্যের বিনিয়োগ হতে হবে উম্মাহর খেদমতে, উম্মাহকে একতাবদ্ধ করার লক্ষ্যে।
ব্যারিস্টার রেজাউল করিম বলেন, একমাত্র ইসলাম পারে বাংলাদেশকে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় জাতিতে পরিণত করতে। এই পরিক্রমায় তিনি ঐক্য, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, ন্যায়বিচার ও রাজনৈতিক আখাঙ্খা এই চারটি বিষয়কে গুরুত্বপূর্ন বলে আখ্যায়িত করেন। তিনি বলেন, জাতীয়তাবাদ ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা আমাদেরকে কখনও প্রকৃত অর্থে ঐক্যবদ্ধ করতে পারেনি। আগ্রাসনের মুখে ও জালিম উৎখাতে মানুষ সাময়িকভাবে ঐক্যবদ্ধ হলেও এই ঐক্য কখনও দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। তিনি বলেন, একমাত্র ইসলামের মাধ্যমেই মানুষ ঐক্যবদ্ধ হতে পারে, যেমনটি তারা হয়েছিল খিলাফত ব্যবস্থার অধীনে ইরাক থেকে নিয়ে স্পেন পর্যন্ত। অত্যাচার এবং অবিচারের বিরুদ্ধে চলমান সংগ্রামকে সফল করতে, খিলাফতের পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ন। আল্লাহর কিতাব এবং রাসূলের (সা.) সুন্নাহ অনুযায়ী পরিচালিত খিলাফতই একমাত্র ব্যবস্থা, যা সকল প্রকার বৈষম্য, দুর্নীতি এবং অত্যাচার থেকে মুক্ত একটি ন্যায়বিচারমূলক রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা করতে পারে। ইসলামের সৎ ও সক্ষম নেতৃত্বই মুসলিম উম্মাহর জন্য শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার জন্য সর্বোত্তম পথ, এবং জনগণ এই আদর্শ প্রতিষ্ঠার জন্য ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে।
সেমিনারের শুরুতে উস্তাদ আওলাদ আবু তাকওয়া পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত করেন এবং জনগণের এই বিজয়ে আল্লাহ (সুবঃ) শোকর আদায়, শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা, মজলুমদের সুস্থতা ও বাংলাদেশে খিলাফত প্রতিষ্ঠার দোয়ার মাধ্যমে সেমিনারটির পরিসমাপ্তি ঘটে। সংবাদ বিজ্ঞপ্তি