সোনালি বাংলাদেশ ইউকে : অভাবনীয় সফলতার গল্প
প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
‘২০২৪ সালে ১০.৯৩ মিলিয়ন পাউন্ড মুনাফা অর্জন’
বিশেষ প্রতিবেদন, দেশ ডেস্ক, লন্ডন, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ : সোনালি বাংলাদেশ ইউকে লিমিটেড (এসবি.ইউকে) শুধুমাত্র একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান নয়–এটি বিশ্বের পরিবর্তনশীল অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় নতুন নতুন উদ্ভাবনী সুবিধার সাথে সম্পৃক্ত হয়ে নিজেদের অবস্থান পাকাপোক্ত করার এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত । যুক্তরাজ্যের বাংলাদেশি কমিউনিটিকে আর্থিক সেবা প্রদানের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত সোনালি বাংলাদেশ ইউকে একটি কঠিন যাত্রার মধ্য দিয়ে আজকের অবস্থানে এসেছে । যাত্রাপথে নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে বিজনেস এবং কর্পোরেট আর্থিক সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে সেরা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।
একটি অসাধারণ পরিবর্তন : ব্যাংকিং থেকে নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান হয়ে ওঠা
সোনালি বাংলাদেশ ইউকে নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানে (এনবিএফআই) রূপান্তরিত হওয়া তার ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় । ২০২২ সালে ব্যাংকিং লাইসেন্স বাতিল হওয়ার পর এটি সহজেই একটি বাণিজ্য-কেন্দ্রিক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত হয়, যার মধ্যে তার সুইফট স্ট্যাটাস এবং কার্যক্রমের সক্ষমতা বজায় থাকে । ‘ফিনিক্স’ প্রকল্পের মাধ্যমে সোনালি বাংলাদেশ ইউকে পূর্ববর্তী সমস্যাগুলো মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছে । শক্তিশালী পরিচালনা কাঠামো এবং নিয়ম-নীতি কার্যকর করেছে । এই প্রকল্পটি এখনো চলমান, যেহেতু প্রতিষ্ঠানটি তার কার্যক্রমগুলোকে সম্পূর্ণরূপে রেগুলেটরী এক্সপেকটেশনের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ করার জন্য কাজ করছে।
যুক্তরাজ্যে বাণিজ্যিক সেবা প্রদান এবং বাংলাদেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রতিনিধি হিসেবে (ইউকেতে) কাজ করে সোনালি বাংলাদেশ ইউকে ২০২৩ সালে ৩.১ মিলিয়ন পাউণ্ডের মুনাফা অর্জন করেছে । এছাড়া, ২০২৪ সালে ১০.৯৩ মিলিয়ন পাউণ্ড মুনাফা অর্জনের পূর্বাভাস দিয়েছে– যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৩০ শতাংশ বেশি।
নতুনত্ব আনয়নে কার্যকর পদক্ষেপ :
সোনালি বাংলাদেশ ইউকের সাফল্য লাভের একটি বড় কারণ হচ্ছে নতুনত্ব আনয়নে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা। সাম্প্রতিক পদক্ষেপগুলোর মধ্যে রয়েছে:
ডোকা বাই শুরেকম্প:
বাণিজ্যিক অর্থ ব্যবস্থাকে স্বয়ংক্রিয়করণ, যা ঝুঁকি কমাতে এবং উৎপাদনশীলতা বাড়াতে সহায়তা করে।
ফিনাস্ট্রার ফিনানসেয়া:
একটি শক্তিশালী আর্থিক ব্যবস্থাপনা, যা পুরনো সরঞ্জামগুলোকে আধুনিকায়ন করে হিসাবরক্ষণ কার্যক্রম সহজ করে।
ট্রেইডস্ট্রিম: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে বাণিজ্যিক ডকুমেন্ট অটোমেশন, যা নির্ভুলতা এবং অনুবর্তিতা উন্নত করে।
এই উদ্যোগগুলি সোনালি বাংলাদেশ ইউকের সক্ষমতা প্রদর্শন করে, যা আধুনিকী করণের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নিয়ম-নীতি বজায় রেখেছে এবং একটি শক্তিশালী কার্যক্রমের ভিত্তি নিশ্চিত করেছে।
ডাইভার্সিফাইড গ্রুথ স্ট্রাটেজি:
২০২৪ সালে সোনালি বাংলাদেশ ইউকে তার ব্যবসায়িক পোর্টফোলিও বৈচিত্র্যময় করতে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নিয়েছে:
ট্রেড ফাইন্যান্স এক্সপানশন:
সোনালি বাংলাদেশ ইউকে কৌশলগতভাবে আফ্রিকা এবং দক্ষিণ এশিয়ার উচ্চ সম্ভাবনাময় অঞ্চলে তার বাণিজ্যিক ফাইন্যান্স কার্যক্রম সম্প্রসারিত করতে কাজ করছে। এই অঞ্চলগুলোর স্থানীয় ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাথে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে সোনালী বাংলাদেশ ইউকে কাজ করবে, এতে অর্থনৈতিক ঝুঁকি কমবে এবং মুনাফা বাড়বে । তাছাড়া, উক্ত আঞ্চলিক বাজারে প্রবেশ করেল বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্য করিডরের ওপর নির্ভরশীলতা কমাবে, যা দীর্ঘমেয়াদী স্থিতিশীলতা এবং প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করবে।
কর্পোরেট ফাইন্যান্স:
প্রতিষ্ঠানটি এ-প্লাস রেটেড ইউকে খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে কাজ করে কর্পোরেট ফাইন্যান্স ক্ষেত্রে প্রবেশ করেছে। সোনালী বাংলাদেশ ইউকে সম্প্রতি ৩০ মিলিয়ন অর্থায়ন করেছে, যা সুরক্ষিত জামানত যেমন ইনভেন্টরি, পাওনাদারী এবং বিল অব এক্সচেঞ্জ দ্বারা সমর্থিত। এই সাহসী পদক্ষেপ সোনালী বাংলা ইউকের সক্ষমতা প্রদর্শন করে, যা যুক্তরাজ্যের খুচরা খাতের চাহিদা অনুযায়ী তার আর্থিক পণ্যগুলিকে যথাযথভাবে সামঞ্জস্য করতে পারে এবং ঝুঁকি সঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারে।
রিয়েল এস্টেট ফাইন্যান্স:
আয়ের বিভিন্ন খাতে ভিন্নতা আনতে সোনালি বাংলাদেশ ইউকে যুক্তরাজ্যে রিয়েল এস্টেট ব্রিজিং ফাইন্যান্সে প্রবেশ করেছে, যার প্রাথমিক পাইলট পোর্টফোলিও ছিল ১০ মিলিয়ন পাউণ্ড। ২০২৪ সালের শেষ দিকে ৭.৭ মিলিয়ন পাউণ্ড বরাদ্দ করা হয়েছে । তাছাড়া, অতিরিক্ত আরো ২.৪ মিলিয়ন পাউন্ড ২০২৫ সালের প্রথম দিকে বিতরণ করা হবে । কঠোর আন্ডাররাইটিং মানদণ্ড অনুসরণ করে, সোনালি বাংলাদেশ ইউকে নিশ্চিত করেছে যে, এই নতুন ব্যবসা লাইনে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার একটি উচ্চ মান বজায় রাখা হবে। এই ভিন্নতা সোনালি বাংলাদেশ ইউকের ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং মুনাফা বৃদ্ধির উদ্ভাবনী কৌশল প্রদর্শন করে।
২০২৪ সালে রেকর্ড-ব্রেকিং অর্জন:
অসাধারণ মুনাফা : ২০২৪ সালে ১০.৯৩ মিলিয়ন পাউন্ড মুনাফা অর্জন করেছে সোনালি বাংলাদেশ ইউকে । যা তার বাজেটকৃত ৪.৭ মিলিয়ন পাউণ্ডের তুলনায় ১৩০ পার্সেন্ট বেশি । এই চমকপ্রদ ফলাফল নিম্নলিখিত কারণে সম্ভব হয়েছে :
বাণিজ্যিক অর্থায়নে গতি: মাসিক আয় ১ মিলিয়ন পাউণ্ড ছাড়িয়ে গেছে, যা তার মূল ব্যবসা কার্যক্রমের শক্তিশালী পারফরম্যান্সকে প্রতিফলিত করে।
নতুন আয়ের উৎস: রিয়েল এস্টেট এবং কর্পোরেট ফাইন্যান্সে উদ্যোগগুলি এই মুনাফায় উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে।
ম্যাক্রোইকোনমিক সহায়ক শক্তি: সারাবছর উচ্চ সুদের হার নিট সুদ আয় বৃদ্ধি করেছে।
ডিভিডেন্ড ঘোষনা: সোনালি বাংলাদেশ ইউকের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো, প্রতিষ্ঠানটি ২০২৪ সালে ২ মিলিয়ন ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে, যা তার অসাধারণ আর্থিক কর্মক্ষমতা এবং কৌশলগত পুনরুদ্ধারের প্রমাণ । এই অর্জন শুধুমাত্র সোনালী বাংলাদেশ ইউকের জন্য প্রথম নয়, বরং এটি একটি বিদেশী বাংলাদেশি কোম্পানির দ্বারা ঘোষিত সর্বোচ্চ ডিভিডেন্ড, যা বিদেশী বাংলাদেশি উদ্যোগগুলোর মধ্যে একটি নতুন মানদণ্ড স্থাপন করেছে।
উজ্জ্বল ভবিষ্যত
সিইও মাসুম বিল্লাহর নেতৃত্বে সোনালি বাংলাদেশ ইউকে একটি সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের দিকে আত্মবিশ্বাসীভাবে এগিয়ে যাচ্ছে । এর প্রধান প্রকল্প “ফিনিক্স” সোনালি বাংলাদেশ ইউকের আর্থিক খাতে ভূমিকা পুনরায় সংজ্ঞায়িত করার একটি বৃহত্তর মিশন।
সোনালি বাংলাদেশ ইউকের দৃষ্টিভঙ্গির মূল হল যুক্তরাজ্যে বসবাসকারী বাংলাদেশি জনগণের সেবা প্রদান, যারা দীর্ঘদিন ধরে এমন আর্থিক সেবার প্রত্যাশা করেছে, যা তাদের বিশেষ চাহিদা এবং আকাঙ্ক্ষার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। সোনালি বাংলাদেশ ইউকে তার সেবাগুলো এমনভাবে সামঞ্জস্য করছে, যাতে তারা তাদের লক্ষ্য অর্জন করতে পারে, একই সাথে তাদের ঐতিহ্যগত সাংস্কৃতিক এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখে।
এছাড়া, সোনালি বাংলাদেশ ইউকে যুক্তরাজ্য এবং বাংলাদেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ককে জোরদার করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যা বাণিজ্য এবং আর্থিক মধ্যস্থতার একটি গুরুত্বপূর্ণ করিডোর ।
এই প্রতিষ্ঠানটি শুধুমাত্র একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানই নয়, দুই দেশের মধ্যে একটি সেতু হিসাবে কাজ করছে, উন্নয়ন এবং কমিউনিটিকে শক্তিশালী করছে।