মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে বার্মিংহামে সম্প্রীতি ফেস্ট উদযাপন
প্রকাশিত হয়েছে : ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
জুয়েল রাজ:: আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে যুক্তরাজ্যের বার্মিংহামে উদ্?যাপিত হয়েছে ব্যানার ফেস্ট ২০২৫। পূর্বানাট ও সম্প্রীতি কনসার্ট ইউকের আয়োজনে পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষা ও সংস্কৃতির এক অপূর্ব মিলন মেলা। গত ২২ ফেব্রুয়ারি বার্মিংহামের ঐতিহ্যবাহী দ্যা রেপ থিয়েটারে বিকাল ৪ টা থেকে সন্ধ্যা ৭ টা ব্যাপী চলে এই উদযাপন।
বাংলাদেশের পাশাপাশি ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ও আফ্রিকার দেশ সমূহের শিশু কিশোর ও শিল্পীরা এতে অংশ নেয়। রিসনা হকের সঞ্চালনায় বার্মিংহাম সিটি কাউন্সিলের পক্ষে বক্তব্য রাখেন, কালচার সার্ভিস ম্যানেজার ক্লেয়ার স্টারমারএবং পার্টনারশিপ এন্ড ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার, শার্লিন কার্টার জেমস। অনুষ্ঠানের শুরুতে ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপট ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি প্রাপ্তি নিয়ে একটি অ্যানিমেটেড তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। পূর্বানাটের সিইও মুরাদ খান আগত অতিথি ও বার্মিংহাম সিটি কাউন্সিল এবং দ্যা রেপ থিয়াটারকে এমন আয়োজনে সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ , গ্রিস,লাটভিয়া ,বসনিয়া ,ইউক্রেন ,চেক রিপাবলিক , স্লোভেকিয়া,রোমানিয়া ,পোল্যান্ড,তানজানিয়ার শিশু কিশোর ও শিল্পীরা তাঁদের নিজের দেশের ভাষায় ,তাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে ধারণ করে উপস্থাপন করেন নাচ গান ,শিশুদের ছড়া ইত্যাদি । প্রতিটা দেশের ঐতিহ্যগত ও রঙিন পোষাকে পুরো মিলনায়তনকে রাঙিয়ে তুলেছিল এক অন্য আবহে।
সর্বকনিষ্ঠ দুইজন অংশগ্রহণকারী অংশ নিয়েছিল লাটভিয়ার হয়ে। কনিষ্ঠ দুই শিশুর মা লিটাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম ,এত ছোট এদের নিয়ে এই অনুষ্ঠানে অংশে নেয়ার কারণ কি? সেই মা বলেন, আমার সন্তানদের নিয়ে অংশ নিয়েছি, কারণ এই বয়সেই যদি ওরা বিভিন্ন দেশের শিল্প সংস্কৃতির সাথে পরিচিত হয় তবে তাদের মনে সেটা গেঁথে থাকবে ,অন্যের সংস্কৃতিকে ভালোবাসতে শিখবে, সুন্দর মনের মানুষ হিসাবে বেড়ে উঠবে বলে আমার বিশ্বাস।
শিল্পীদের পরিবেশনা দেখে মনে হয়েছে, শিল্পের নির্দিষ্ট কোনো দেশ নেই সীমানা নেই , এইটাই সত্য। এই আয়োজন তাই সবাইকে এক মঞ্চে নিয়ে আসতে পেরেছে, ভাষার দূরত্ব সেখানে কোন বাঁধা সৃষ্টি করতে পারেনা। সঙ্গীত এবং নৃত্যের একটা নিজস্ব শক্তি আছে । সামনের চেয়ারে বসা বসনিয়ান এক কিশোরী কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস সম্পর্কে সে জানে কী না ? পরীর মত কিশোরীটি বলল, আজকে এখানে এসে আমি এই ইতিহাসটা জানলাম ।আমার খুব আনন্দ হচ্ছে অন্য দেশের ভাষা ,গান নাচ সম্পর্কে আমি জানতে পেরেছি।
তানজেনিয়ার দুই শিল্পী ,বাংলাদেশি বাউলেদের মতোই মঞ্চে আসেন একতারা, খঞ্জন এর সাদৃশ্য বাদ্যযন্ত্র নিয়ে পরিবেশন করেন তাদের ফোক সঙ্গীত ,দর্শকদের তাদের গানের সাথে কণ্ঠ মেলাতে অনুরোধ করেন ,সব শেষ গানে দুইটি লাইন যখন দর্শকদের নিয়ে গাইলেন ” এয়ে মামা, এনা পান্ডা মামা” অনুষ্ঠান শেষে জিজ্ঞেস করলাম এই দুই লাইনের অর্থ কি , তিনি জানালেন এর মানে হচ্ছে ” মা আমি তোমাকে ভালোবাসি”। সবশেষ পরিবেশনা ছিল বাংলাদেশি ধামাইল , দেশ ,মহাদেশের গণ্ডি পেরিয়ে সেই ধামাইলে মেতে উঠেন সব অংশগ্রহণকারী, যা সত্যিই ছিল মনোমুগ্ধকর । মনে হয়েছে সত্যিকার অর্থেই সঙ্গীদের কোন ভাষা নেই । একই গানে ছন্দে সবাই মাতোয়ারা হয়ে উঠেন। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস সত্যিকার অর্থেই একই মঞ্চে আন্তর্জাতিক রূপ পায়। পূর্বানাটের পরিচালক রাজিব জেবতিক অনুষ্ঠানে সমাপনি বক্তব্য রাখেন ।