পাউন্ডের বিপরীতে রেকর্ড উচ্চতায় টাকা : এই ঊর্ধ্বগতির কারণ কী?
প্রকাশিত হয়েছে : ২৫ জুন ২০২৫
শের মাহমুদ
ব্রিটিশ পাউন্ড সম্প্রতি বাংলাদেশি টাকার বিপরীতে সর্বোচ্চ বিনিময় হার ছুঁয়েছে । ১ পাউণ্ডের বিনিময় হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬৭ টাকায় । এই ঊর্ধ্বগতি প্রবাসী বাংলাদেশিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। পাউন্ডের এই রেকর্ড মূল্য বৃদ্ধির অর্থ কেবল ব্রিটিশ মুদ্রার শক্তি বৃদ্ধি নয়, বরং এটি বৈশ্বিক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তনের প্রতিফলন। বৈদেশিক মুদ্রা বা রেমিটেন্স লেনদেনের সাথে যাঁরা যুক্ত, তাঁদের জন্য মুদ্রাবিনিময় হারে এই ঊর্ধ্বগতি বাড়তি লাভ এনে দিচ্ছে।
এই পরিস্থিতির প্রধান একটি কারণ হচ্ছে মার্কিন ডলারের দুর্বলতা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পর বিশ্বে গুরুত্বপূর্ণ সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলগুলোতে উত্তেজনা হ্রাস পেয়েছে, ফলে ডলারের মান কমে গেছে। সাধারণত যুদ্ধ বা অনিশ্চয়তার সময়ে ডলার নিরাপদ মুদ্রা হিসেবে শক্তিশালী হয়, কিন্তু যখন যুদ্ধবিরতি বা কূটনৈতিক সমাধান দেখা দেয়, তখন অন্য মুদ্রাগুলোর প্রতি আস্থা ফিরে আসে এবং ডলারের মান হ্রাস পায়। এইবার, ডলারের পতনের বিপরীতে ব্রিটিশ পাউন্ড আরও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে, যার ফলশ্রুতিতে টাকার বিপরীতে পাউন্ডের দর বেড়েছে।
বর্তমানে বাংলাদেশে প্রতি ডলারের বিনিময় হার প্রায় ১২৩ টাকা, যা আগের তুলনায় উচ্চ হলেও পাউন্ডের ১৬৭ টাকার তুলনায় অনেক পিছিয়ে । এই দুই প্রধান মুদ্রার হারের মধ্যে পার্থক্য বৈশ্বিক মুদ্রাবাজারে ভারসাম্যের পরিবর্তনকে ইঙ্গিত করে । এটি বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি, কমে যাওয়া বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে টাকার মান ধরে রাখতে সরকারের লড়াইকেও প্রতিফলিত করে। দেশের আমদানিকারক ও ভ্রমণকারীদের জন্য এই বৃদ্ধি ব্যয়বহুল হলেও রপ্তানিকারক ও রেমিটেন্স গ্রহণকারীদের জন্য এটি লাভজনক।
বৈশ্বিক স্বর্ণবাজারেও এই পরিবর্তনের প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে। যুদ্ধের উত্তেজনা কমায় স্বর্ণের দাম পড়ে গেছে। ডলারের মতো স্বর্ণও যুদ্ধকালীন নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচিত হয়। যখন রাজনৈতিক সংকট দেখা দেয়, তখন বিনিয়োগকারীরা স্বর্ণে ঝুঁকে পড়ে, ফলে দাম বেড়ে যায়। সম্প্রতি স্বর্ণের দাম প্রতি ট্রয় আউন্সে ৩ হাজার ৫০০ ডলার পর্যন্ত উঠেছিল, কিন্তু সংঘাত কমে যাওয়া ও কূটনৈতিক প্রচেষ্টা বৃদ্ধির ফলে এটি এখন কমে ৩ হাজার ৩০০ ডলারে নেমে এসেছে। এই পতন বিনিয়োগকারীদের ভয়ের মাত্রা কমে যাওয়ার এবং বৈশ্বিক স্থিতিশীলতার ইঙ্গিত দেয়।
সারসংক্ষেপে, ব্রিটিশ পাউন্ডের টাকার বিপরীতে রেকর্ড উচ্চ হারের পেছনে বৈশ্বিক নানা জটিল কারণ রয়েছে—এর মধ্যে রয়েছে ডলারের দুর্বলতা ও ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার প্রশমন। এই ধরনের পরিবর্তন কিছু খাতে সুবিধা এনে দিলেও আমদানি নির্ভর অর্থনীতির জন্য এটি চ্যালেঞ্জ তৈরি করে। স্বর্ণের দাম কমা এবং ডলারের পতন এটা দেখায় যে, বৈশ্বিক রাজনীতির পরিবর্তনে আর্থিক বাজার কত দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানাতে পারে। যেমনটা সবসময় ঘটে, বৈশ্বিক অর্থনীতির আন্তঃসংযুক্ত প্রকৃতি দেখায়, স্থানীয় মুদ্রার মান অনেক সময় দূরবর্তী ঘটনার প্রভাবেই পরিবর্তিত হয়।
শের মাহমুদ : সিইও, বিএ এক্সচেঞ্জ ইউকে ও গ্লোবাল রেমিটেন্স স্পেশালিস্ট