বাংলাদেশে সাংবাদিক নির্যাতন ও বাকস্বাধীনতা হরণের নিন্দা জানিয়ে ৮৮ প্রবাসী বিশিষ্টজনের বিবৃতি
প্রকাশিত হয়েছে : ০৪ জুলাই ২০২৫
বাংলাদেশে সাংবাদিকদের ওপর চলমান নিপীড়ন ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে নিন্দা জানিয়েছেন ৮৮ প্রবাসী সাংবাদিক, লেখক, বুদ্ধিজীবী, সংস্কৃতিকর্মী ও অধিকারকর্মী। বুধবার গণমাধ্যমে প্রেরিত এক যৌথ বিবৃতিতে তাঁরা বলেছেন, বর্তমান সরকারের আমলে দেশে সাংবাদিক নির্যাতন ও দমনপীড়ন নজিরবিহীন পর্যায়ে পৌঁছেছে, যা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও মানবাধিকারের সম্পূর্ণ পরিপন্থী।
বিবৃতিতে বলা হয়, গত ১১ মাসে অন্তত ৪১২ জন সাংবাদিককে হত্যা মামলা সহ বিভিন্ন হয়রানিমূলক মামলায় আসামি করা হয়েছে। চাকরিচ্যুত হয়েছেন হাজারের বেশি সাংবাদিক ও সম্পাদক। তিন শতাধিক সাংবাদিকের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে এবং অনেকের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। এ ছাড়া ১৬৮ জন সাংবাদিকের প্রেস অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড বাতিল এবং ১০১ জনের প্রেস ক্লাবের সদস্যপদ স্থগিত বা বাতিল করা হয়েছে।
এই বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন ইউরোপ, আমেরিকা, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত শতাধিক প্রবাসী সাংবাদিক, লেখক ও বুদ্ধিজীবী। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন বিশিষ্ট সাংবাদিক ও গবেষক সৈয়দ বদরুল আহসান, কথাসাহিত্যিক ড. মুকিদ চৌধুরী, সাংবাদিক সুজাত মনসুর প্রমুখ।
তাঁরা অভিযোগ করেন, সরকারি উদ্যোগেই সংবাদমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করা হচ্ছে। নির্যাতন আর হয়রানির মাধ্যমে স্বাধীন সাংবাদিকতাকে ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে। বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, সরকারপ্রধান একজন শান্তিতে নোবেলজয়ী এবং উপদেষ্টা পরিষদের অনেকেই একসময় সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় সোচ্চার ছিলেন, অথচ তাঁদের সময়েই ভয়াবহ দমনপীড়নের শিকার হচ্ছেন সাংবাদিকরা — যা অত্যন্ত হতাশাজনক।
বিবৃতিতে তাঁরা স্পষ্ট বলেন, দমননীতি শুধু সাংবাদিকদের জীবনে প্রভাব ফেলছে না, এর ফলে দেশের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তিও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সংবাদমাধ্যমের কণ্ঠরোধ মানে জনগণের কণ্ঠরোধ।
বিবৃতিতে প্রবাসী সাংবাদিক ও লেখকরা চারটি প্রধান দাবি উত্থাপন করেছেন, সেগুলো হচ্ছে- সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সব হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার। চাকরিচ্যুত সাংবাদিকদের পুনর্বহাল। স্বাধীন ও নিরপেক্ষ গণমাধ্যম নিশ্চিত করা। সরকারি দমননীতি অবিলম্বে বন্ধ করা।
তাঁরা দেশের বিভিন্ন স্থানে সাংবাদিকদের ওপর মব অ্যাটাক, সংবাদপত্র ও টিভি চ্যানেল বন্ধ এবং কলম থামিয়ে দেওয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে অবিলম্বে এই পরিস্থিতির অবসান ঘটানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে রয়েছেন যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, সুইডেন, জার্মানি, সুইজারল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থানরত প্রবাসী সাংবাদিক, গবেষক, লেখক, মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষক, সাংস্কৃতিক কর্মী ও অধিকারকর্মীরা।
বিবৃতিতে তাঁরা বলেছেন, এই বিবৃতি শুধু প্রতিবাদ নয়, বরং দেশের গণতন্ত্র ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে প্রবাস থেকে সাহসী কণ্ঠস্বর। বাংলাদেশ যেন মানবাধিকার ও বাকস্বাধীনতার পক্ষে দৃষ্টান্ত হয়ে উঠতে পারে-এমন প্রত্যাশাই জানিয়েছেন তাঁরা। সংবাদ বিজ্ঞপ্তি