নিউইয়র্কে বাংলাদেশী কূটনীতিক কারাগারে
প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ জুন ২০১৭
দেশ ডেস্ক : শ্রমিক পাচার এবং গৃহকর্মীকে নির্যাতন ও ভয় দেখিয়ে বিনা বেতনে কাজ করানোর অভিযোগে নিউইয়র্কে বাংলাদেশের উপ-কনসাল জেনারেল মো. শাহেদুল ইসলামকে পুলিশ তাঁর বাসা থেকে গ্রেপ্তার করেছে। ১২ জুন সোমবার স্থানীয় সময় সকালে গ্রেপ্তারের কয়েক ঘণ্টা পর তাঁকে কুইন্সের আদালতে হাজির করা হয়।
কুইন্সের ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি রিচার্ড ব্রাউনের দপ্তর থেকে প্রচারিত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, শাহেদুলের বিরুদ্ধে এক বিদেশিকে এনে তাঁর বাসায় রেখে ২০১২ থেকে ২০১৬ সালের মে পর্যন্ত বিনা বেতনে জোর করে কাজ করানোর ঘটনায় শ্রম পাচার ও নির্যাতনের অভিযোগ আনা হয়েছে। বিচারক ড্যানিয়েল লুইস ৫০ হাজার ডলারের বন্ড বা ২৫ হাজার ডলারে তাঁর জামিন ঠিক করে দেন এবং তাঁর পাসপোর্ট জব্দ করার নির্দেশ দেন। বিচারে দোষী সাব্যস্ত হলে তাঁর সর্বোচ্চ ১৫ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।
জামিন পেলে মামলার শুনানির জন্য ২৮ জুন শাহেদুলকে আবার আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, রাজনৈতিক নিয়োগপ্রাপ্ত শাহেদুল ইসলাম কূটনৈতিক কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পেলেও ‘কূটনৈতিক দায়মুক্তি’র অধিকারী না হওয়ায় গ্রেপ্তার এড়াতে পারেননি। ২০১১ সালে নিউইয়র্ক মিশনে কাউন্সিলর পদে যোগ দেন তিনি।
এদিকে নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল মো. শামীম আহসান গত ১৩ জুন মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মুঠোফোনে মিডিয়াকে বলেন, শাহেদুল ইসলামের গৃহকর্মী রুহুল আমিন ২০১৬ সালের ১৭ মে নিখোঁজ হওয়ার পরদিনই মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরকে বিষয়টি জানানো হয়েছিল। রুহুল আমিন উধাও হয়ে যাওয়ার ১৩ মাস পর এসব অভিযোগ কেন তোলা হচ্ছে, তা রহস্যজনক।
এদিকে নিউইয়র্কে শাহেদুল ইসলামকে আটকের ঘটনায় ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স জোয়েল রিফম্যানকে মঙ্গলবার দুপুরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করে অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়। তিনি ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব মাহবুব উজ জামানের সঙ্গে দেখা করলে একজন পলাতক ব্যক্তির কথায় কেন একজন কূটনীতিককে আটক করা হয়েছে, সেটি রিফম্যানের কাছে জানতে চাওয়া হয়। জানা গেছে, বিষয়টি বাংলাদেশের কাছে পরিষ্কার নয় বলে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে এ নিয়ে বেশ কিছু প্রশ্ন তোলা হয়েছে।
শামীম আহসান বলেন, শাহেদুল ইসলামের জামিনের জন্য বন্ড সংগ্রহসহ প্রয়োজনীয় সব প্রক্রিয়া শেষ করতে কনস্যুলেট এবং ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাস মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের সঙ্গে সমন্বয় রেখে কাজ করছে।
বিষয়টির সঙ্গে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি জড়িত বলে আদালতে উপস্থিত ছিলেন মার্কিন সুপ্রিম কোর্টের সাবেক পাবলিক ডিফেন্ডার অ্যাটর্নি মঈন চৌধুরী। তিনি বলেন, শাহেদুল ইসলামের পরিবারের পক্ষ থেকে আদালতে যাওয়া হয়েছে। পারিবারিকভাবে অর্থ জোগাড় করে (৫০ হাজার ডলার) আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে। তাঁর জামিনে মুক্তি পাওয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে।
মঈন চৌধুরী আরও বলেন, শাহেদুল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগ খুবই গুরুতর। কিন্তু ঘটনা ঘটার অনেক দিন পর অভিযোগকারী আইনের শরণাপন্ন হয়েছেন। সে জন্য এই সুযোগটি শাহেদুল ইসলাম পেতে পারেন।
গৃহকর্মীকে নিয়ে একই রকম জটিলতা তৈরি হয়েছিল ২০১৪ সালে। সেবার এ রকম এক অভিযোগে নিউইয়র্কে বাংলাদেশের তখনকার কনসাল জেনারেল মনিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ওই মামলার নোটিশ দেওয়ার মাঝপথে তিনি নিউইয়র্ক ছেড়ে যান।