সিলেটে বন্যা কবলিত মানুষের দুর্গতি
প্রকাশিত হয়েছে : ০৬ জুলাই ২০১৭
ডেস্ক রিপোর্ট: সিলেটের বন্যা কবলিত ৭ উপজেলার মানুষের দুর্গতি বেড়েই চলছে। বন্যার্তদের অভিযোগ- প্রয়োজন মতো ত্রাণ পাচ্ছেন না তারা। প্রশাসন বলছে, ত্রাণ পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। মানুষ শান্তিতে আছে। বন্যা কবলিত দুর্গতিতে থাকা মানুষদের নিয়ে এ রকম খেলা চলছে।
গতকাল সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার চণ্ডি প্রসাদ মডেল প্রাথমিক স্কুলের মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে গেলে বন্যার্তরা জানিয়েছেন- ৬ দিন আগে তারা আশ্রয় কেন্দ্রে উঠার পর ইউএনও হুররে জান্নাতের পক্ষ থেকে কিছু শুকনো খাবার দেয়া হয়েছিল। এরপর এমপি একদিন ত্রাণ দিয়ে যান। আর কেউ তাদের কাছে ত্রাণ নিয়ে যায়নি। তারা অনাহারে-অর্ধাহারে বসবাস করছেন। ওই আশ্রয় কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রক স্কুলের প্রধান শিক্ষক কাঞ্চন চন্দ্র দে। তিনি জানান- বন্যার্তরা নিজ উদ্যোগে এতদিন খেয়েছে। গতকাল থেকে স্থানীয় এক ধনাঢ্য ব্যক্তি তাদের খাবার দিচ্ছেন। বন্যার্তদের মধ্যে খিচুড়ি বিতরণ করা হয়েছে। ফেঞ্চুগঞ্জের হাকালুকিপাড়, গোলাপগঞ্জের কুশিয়ারা তীরবর্তী এলাকা, বালাগঞ্জের গালিমপুর, পূর্ব পৈলন, দেওয়ানবাজার, ওসমানীনগরের সাদিপুর, পশ্চিম পৈলনপুর, বুরুঙ্গা ইউনিয়নের অনেক জায়গায় পানিবন্দি মানুষের মধ্যে গতকাল পর্যন্ত ত্রাণ পৌঁছেনি। প্রশাসন থেকে যে ত্রাণ দেয়া হচ্ছে সেগুলো কেবল তালিকায় থাকা পরিবারগুলো সরকারি বরাদ্দ পেয়েছে। এর বাইরে থাকা বহু গ্রামের ত্রাণ পাচ্ছে না। ওসমানীনগরের সাদিপুর ইউনিয়নের সুরিকোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আশ্রয় কেন্দ্রে বসবাস করছে ২৫টি বানভাসি পরিবার।
গতকাল দুপুরে ওই আশ্রয় কেন্দ্রে থাকা প্রভাতী নাথ, আহাদ মিয়া জানিয়েছেন- তারা ৫ দিন ধরে আশ্রয় কেন্দ্রে রয়েছেন। সরকারিভাবে কোনো ত্রাণ পাচ্ছে না। বহু পরিবার অভুক্ত অবস্থায় রয়েছেন। সাদিপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুর রব গতকাল বিকালে জানিয়েছেন- প্রশাসন থেকে শুধু ২৭০ জন বন্যার্ত মানুষকে ত্রাণ দেয়া হয়েছে। ত্রাণের জন্য এলাকায় হাহাকার চলছে বলে দাবি করেন তিনি। সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. রাহাত আনোয়ার জানিয়েছেন- কম করে হলেও সবাইকে ত্রাণ দেয়া হচ্ছে। মঙ্গলবার সিলেটে দুর্যোগ ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল চৌধুরী মায়া ও ত্রাণ সচিব শাহ কামাল আহমদের সামনেই আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ জানিয়েছেন- মানুষ দুর্ভোগে আছে, ত্রাণ পাচ্ছে না বলে মিডিয়ায় যে খবর আসছে সেটি সত্য নয়। ভুয়া খবর। বন্যা এলাকার মানুষ খাবার পাচ্ছে, শান্তিতে আছে। সিলেটে এবারের বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে প্রচুর। প্রশাসনের পক্ষ থেকে যে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দেয়া হয়েছে সেগুলোও বেশি। সিলেটের জেলা প্রশাসন থেকে জানা গেছে- বন্যায় এসব উপজেলার ৫৫টি ইউনিয়নের ৪৬৬টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩২ হাজার ৮৪৭টি পরিবার।
বন্যায় চার হাজার ৩৩০ হেক্টর আউশ ধান ও ৩৫ হেক্টর আমন ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সিলেটের বালাগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার উপজেলায় বন্যার্তদের জন্য ১১টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে ১৪৫টি পরিবারের ৬২৯ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। ইতিমধ্যেই বন্যার্তদের সহায়তায় ১২৭ টন চাল ও নগদ ৩ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সড়ক ও জনপথ (সওজ) সূত্র জানায়, বন্যায় সওজের তিনটি সড়ক আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব সড়কের ছয় কিলোমিটার পানির নিচে তলিয়ে রয়েছে। পানি সরে গেলে এসব সড়ক যাতে দ্রুত সংস্কার করা যায়, সেজন্য প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে। কয়েকদিনের মধ্যে টেন্ডার আহ্বান করা হবে। এছাড়া বন্যাকবলিত এলাকায় সওজের ৬০টি ট্রাক দিয়ে সংস্কার কাজ চালানো হচ্ছে। সওজের চেয়ে এলজিইডির আওতাধীন সড়কই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ পর্যন্ত এলজিইডির ২১৬ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সিলেট মৎস্য অফিস সূত্র জানায়, বন্যায় সিলেটের বিভিন্ন উপজেলায় সাত হাজার ২৯৪টি পুকুর ভেসে গেছে। এতে এসব পুকুরে থাকা মাছও বেরিয়ে গেছে। বন্যার কারণে সিলেটের ২০৬টি বিদ্যালয়ে পাঠদান স্থগিত করা হয়েছে বলে শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে। তন্মধ্যে ১৮৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ২১টি উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়।