কয়েক হাজার বাংলাদেশী, রোহিঙ্গা পাচার মামলার রায় আজ থাইল্যান্ডে
প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ জুলাই ২০১৭
দেশ ডেস্ক: কয়েক হাজার বাংলাদেশী ও রাখাইনের রোহিঙ্গাকে পাচার মামলার শুনানি শুরু হয়েছে আজ ব্যাংকক ক্রিমিনাল কোর্টে। কোর্ট আজই এ মামলার রায় দেবে। স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে আটটায় এ রায় ঘোষণার কথা। তবে এখন পর্যন্ত জানা যায় নি রায় ঘোষণা করা হয়েছে কিনা। এ মামলায় অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন থাইল্যান্ডের সেনাবাহিনীর একজন জেনারেল। তাকে নিয়ে মোট আসামী ১০২ জন। তবে এর মধ্যে একজন রিমান্ডে থাকাকালে মারা গেছেন।
২০১৫ সালে সমুদ্রপথে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাংলাদেশী ও মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের পাচার করা হয় থাইল্যান্ডের দক্ষিণাংশে ও মালয়েশিয়ার উদ্দেশে। সমুদ্রে ছোট্ট ছোট্ট নৌযানে আটকা পড়া ওইসব মানুষের কাহিনী তখন সারাবিশ্বে সংবাদ শিরোনামে উঠে আসে। থাইল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চলে দুর্গম জঙ্গল থেকে উদ্ধার করা হয় বহু মানুষকে। উদ্ধার করা হয় অনেক কঙ্কাল। একই অবস্থা বিরাজ করে থাইল্যান্ড থেকে মালয়েশিয়ায় প্রবেশ পথে। সেখানে গণকবর পাওয়া যায়। ধারণা করা হয়, বাংলাদেশীদের পাচার করে জঙ্গলে আটকে রাখা হয়েছিল। খাবার ও পানীয়ের অভাবে তারা মারা যাওয়ার পর ওইসব গণকবরে ফেলে দেয়া হয় তাদের। এ ছাড়া সমুদ্রে ও জঙ্গলে যারা আটকে পড়েন দেশে তাদের স্বজনদের কাছে মুক্তিপণ দাবি করা হয়। সমুদ্রে আটকাপড়া মানুষগুলো খাদ্যের অভাবে মৃত্যুর মুখে পতিত হয়।
ধারণা করায় হয়, সমুদ্রে কয়েক হাজার মানুষ মৃত্যুমুখে পতিত হয়েছে। এ নিয়ে থাইল্যান্ড সহ বিভিন্ন দেশ তৎপর হলেও মিয়ানমার থাকে নীরব। তাতে মিয়ানমারের সঙ্গে মালয়েশিয়ার সম্পর্ক উত্তেজনাপূর্ণ অবস্থায় পৌঁছে। এই পাচারের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে থাইল্যান্ডের সামরিক সরকার আটক করে সেনা সদস্য, পুলিশ, স্থানীয় রাজনীতিক ও মাফিয়াদের। এরা পাচারকারী, ব্রোকার ও কৌশলগত সমর্থন দিয়ে যাচ্ছিল পাচারে। একই সঙ্গে হতদরিদ্র মানুষগুলোর স্বজনদের কাছ থেকে তারা আদায় করছিল মুক্তিপণ। এ মামলার শুনানি শুরু হয়েছে আজ বুধবার সকালে। তবে আদালতকক্ষের ভিতরে সাংবাদিকদের প্রবেশ করতে দেয়া হয় নি। তারা শুনানি প্রক্রিয়া অডিও মাধ্যমে শুনতে পাচ্ছেন। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি। এতে বলা হয়েছে, জাতীয় নিরাপত্তার অজুহাতে বিচারকরা এ মামলার সাক্ষ্যের তথ্য নিয়ে রিপোর্টিংয়ে কঠোর বিধিনিষেধ দিয়েছেন। কিন্তু বিষয়টি থাইল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চলে বেশ আলোড়ন তুলেছে। এ মামলায় যাদের বিচার হচ্ছে তার মধ্যে সর্বোচ্চ পদধারী হচ্ছেন সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট জেনারেল মানাস কোংপান।
২০১৩ সালে বর্তমান সামিরক নেতা প্রায়ুত চান ওচা ছিলেন সেনা প্রধান। তার সময়ে থাইল্যান্ডের ইন্টারনাল সিকিউরিটি কামান্ডের প্রধান ছিলেন মানাস কোংপান। এ ছাড়া আরো যারা এ পাচারে জড়িত তাদের মূল হোতা পাজ্জুবান অংকাচোটেফান। তিনি কো টোং বা বিগ ব্রাদার টোং নামেই বেশি পরিচিত। তার বিরুদ্ধে অভিযোগে পুলিশ বলেছে, তিনি পর্যটকন স্পট কোহ লিপে’র কাছে আন্দামান সাগরে বোটে যাওয়া অভিবাসীদের অবতরণ করাতেন। সেখান থেকে অভিবাসীদের লরিতে করে নিয়ে যাওয়া হতো। রাখা হতো মালয়েশিয়া সীমান্তে। অভিযুক্তদের মধ্যে আরো আছেন সেনাবাহিনীর একজন ক্যাপ্টেন, পুলিশের চার জন পদস্থ কর্মকর্তা, একজন নার্স, কয়েকজন কর্মকর্তা, সাটুন প্রদেশের পেডাং বেসারের মেয়র। আজই এ মামলার রায় দেয়ার কথা রয়েছে। ফলে এ দিকে তাকিয়ে আছে থাইল্যান্ড ও বাকি বিশ্ব।