পানিতে ভাসছে সিলেটের কালীঘাট, সিটি ও হকার মার্কেট
প্রকাশিত হয়েছে : ১৬ আগস্ট ২০১৭
দেশ, ১৬ আগস্ট: পানিতে ভাসছে সিলেটের হকার মার্কেট। সঙ্গে সিটি সুপার মার্কেটও। আর বাণিজ্যিক এলাকা কালীঘাটে নিত্যপণ্যের আড়তেও পানি ঢুকেছে। তিনদিনেও পানি নামেনি। বরং একটু একটু করে পানি বাড়ছে। এর সঙ্গে বাড়ছে ব্যবসায়ীদের মনে শঙ্কা। দোকানের ভেতরে পানি। চেয়ারের উপরে পা তুলে ব্যবসা করছেন তারা। দিনভর কাস্টমারের আশায় চেয়ারে বসেই কাটাচ্ছেন। কিন্তু কাস্টমারের দেখা নেই। তিনদিন ধরে বউনী করতে পারেননি এখানকার ব্যবসায়ীরা। সিলেট শহরের সুরমা নদীর তীরবর্তী এলাকা কালীঘাট। আর কালীঘাটের পাশেই হকার মার্কেট ও সিটি সুপার মার্কেট। তিন এলাকা নগরীর অন্যতম বাণিজ্যিক কেন্দ্র। ছোট-বড় মিলিয়ে এখানে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা সহস্রাধিক। সিলেট সিটি করপোরেশনের পাশেই হচ্ছে সিটি সুপার মার্কেট। বহুতল বিশিষ্ট ওই মার্কেটের নিচ তলার পুরোটাই পানিতে তলিয়ে গেছে। শনিবার তারা এসে দেখেন পানি আর পানি। এ সময় নিচ তলার ব্যবসায়ীরা মালমাত্র খাট কিংবা টেবিলের উপর তুলে রাখেন। আর প্লাস্টিকের অনেক দোকানের মালপত্র পানির মধ্যেই রয়েছে। কয়েকটি ছাপাখানা রয়েছে ওই মার্কেটে। পানি ঢুকে পড়ায় ছাপাখানা বন্ধ রয়েছে।
গতকাল সকালে মার্কেটের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন- সুরমা নদীর পানি খাল ও ড্রেন দিয়ে নগরীতে ঢুকে মার্কেট তলিয়ে গেছে। এখন সুরমা নদীর পানি না নামলে মার্কেটের পানিও নামবে না। এর পাশেই হকার মার্কেট। মার্কেটের অর্ধেকের বেশি এলাকায় পানি আর পানি। হকার মার্কেটে বেশির ভাগ দোকান কাপড়ের। পানি উঠে যাওয়া অনেক দোকানে ব্যবসায়ীদের মালপত্র পানিতে তলিয়ে গেছে। আর প্রতিটি গলিতে রয়েছে হাঁটু ও কোমর পরিমাণ পানি। সকালে কষ্ট করে দোকানিরা এসে দোকান খুললেও কাস্টমারের দেখা মিলছে না তিনদিন ধরে। হকার মার্কেটের ব্যবসায়ী রাসেল আহমদ জানিয়েছেন- যে পানি ঢুকেছে তাতে দুর্গন্ধ রয়েছে। স্যুয়ারেজের ময়লা এসে মিশে একাকার হয়ে গেছে। তিনি বলেন- অনেক দোকানি গত তিন দিন ধরে দোকান খুলছেন না। কালীঘাট এলাকা হচ্ছে সুরমার তীরে অবস্থিত। সিলেট নগরীর পাইকারী আড়তের একমাত্র জায়গা এটি। চাল, পিয়াজ, রসুনসহ নানা পণ্য কালীঘাট থেকেই ছড়িয়ে পড়ে সিলেটে। এ কারণে কালীঘাট হচ্ছে অন্যতম বাণিজ্যিক এলাকা। কালীঘাটের অর্ধেক আড়তই পানিতে তলিয়ে গেছে। গতকাল ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন- কালীঘাটে পানি ঢুকে কয়েক কোটি টাকার মালামালের ক্ষতি হয়েছে। এখনো অনেক দোকানের ভেতরে পানি। সুমন নামের এক ব্যবসায়ী জানিয়েছেন- পানি না কমার কারণে ব্যবসায় মন্দাভাব চলছে। সুরমার পানির সঙ্গে কালীঘাটে পানি একাকার হয়ে গেছে। এদিকে- বন্যার পানি থেকে সিলেট শহরকে রক্ষা করতে সব স্থানে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নেই। অনেক স্থানে সুরমা নদীর তীর দখল করে দোকান-কোঠা নির্মাণ করা হয়েছে। এ কারণে প্রথমেই পানি আঘাত হানে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। সিলেট নগরীর যতরপুর, সুবহানীঘাট এলাকায় গত তিনদিন ধরে পানিবন্দি মানুষ। স্থানীয়রা জানান- সুরমা নদী পর্যন্ত প্রবাহিত খাল দিয়ে পানি ঢুকে তলিয়ে গেছে পুরো সুবহানীঘাট এলাকা। আর পানি ঢুকে শতাধিক পরিবারের বাসাবাড়ির নিচতলার মালামাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের মধ্যে কেউ কেউ অবস্থান নিয়েছেন বাসার ছাদে।
একই অবস্থা উপশহরের কয়েকটি এলাকারও। উপশহরের বিভিন্ন ব্লকের রাস্তা পানিতে তলিয়ে গেছে। উপশহরের বাসিন্দা আবদুস সাত্তার, কলিম উদ্দিন অভিযোগ করেছেন, খালে দিয়ে পানি ঢুকে নিচু এলাকা তলিয়ে গেছে। খালগুলো দখল করে ছোটো করা হয়েছে। এ কারণে পানি দ্রুত নামে না। এ ব্যাপারে তারা সিলেট সিটি করপোরেশনের সহায়তা কামনা করেন। এদিকে- বিকেলে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী নগরীর যতরপুর ও সুবহানীঘাট এলাকা পরিদর্শন করেন। এ সময় তার কাছে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন ছড়া ও খাল দখল হওয়ার কারণে গত তিনদিন ধরে পানিবন্দি অবস্থায় বসবাস করছেন স্থানীয়রা। মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী এ সময় তার পক্ষ থেকে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন। এছাড়া- বন্যার পানিতে মেন্দিবাগ কলাপাড়াসহ কয়েকটি এলাকার নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে। সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে পাওয়া তথ্য মতে, মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় কানাইঘাটে সুরমা নদী বিপদসীমার ৯৪ সেন্টিমিটার, সিলেটে সুরমা বিপদসীমার ৪৫ সেন্টিমিটার, শেওলায় কুশিয়ারা বিপদসীমার ৬৯ সেন্টিমিটার, অমলসীদে কুশিয়ারা বিপদসীমার ৭৩ সেন্টিমিটার এবং শেরপুরে কুশিয়ারা বিপদসীমার ৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সিলেটে মঙ্গলবার সকাল থেকে ভারি বর্ষণ হচ্ছে। এদিকে, সিলেটে সুরমা নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। সুরমা নদীর পানি দু’কূল উপচে সিলেট নগরীর নিচু এলাকায় প্রবেশ করছে। সিটি কর্পোরেশনের একটি সূত্র জানায়, বন্যার পানি নগরীর মাছিমপুর, কলাঘাট, শিবগঞ্জ, উপশহর, মেন্দিভাগ, তেররতন এলাকায় প্রবেশ করেছে।