সিলেটে বন্যায় হাজার কোটি টাকার ক্ষতি
প্রকাশিত হয়েছে : ২৭ জুন ২০২৪
দেশ ডেস্ক:: প্রথম ধাপে বন্যায় সিলেটে তেমন ক্ষতি হয়নি। তবু ক্ষতির পরিমাণ ছিল ৪৮০ কোটি টাকা। কিন্তু দ্বিতীয় ধাপের বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। বলতে গেলে; তছনছ হয়ে গেছে সিলেট। এখনো জেলার ওসমানীনগর, বালাগঞ্জ ও গোলাপগঞ্জে কুশিয়ারা নদীর পানি তাণ্ডব চালাচ্ছে। ফলে ক্ষয়ক্ষতি আরও বাড়তে পারে। ঢলের স্রোত বেশি থাকায় সিলেটে এবারের বন্যায়ও সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে সড়কের। নতুন কাজ করা অনেক সড়কই এখনো পানিতে তলিয়ে আছে। কোনো কোনোটিতে যানবাহন চলাচল সম্পূর্ণ অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এই অবস্থায় বর্ষার শেষে দ্রুত মেরামতের তাগিদ দেয়া হয়েছে বিভিন্ন দপ্তর থেকে।
প্রায় এক মাস ধরে পানি নিচে তলিয়ে আছে হরিপুর-গাছবাড়ি সড়ক। সালুটিকর-গোয়াইনঘাট সড়কে এখনো পানি। এ ছাড়া- বন্যাকবলিত থাকা ৩ উপজেলার ৮০ শতাংশ সড়কই এখনো পানির নিচে। পানি স্থির হয়ে থাকার কারণে ক্ষয়ক্ষতি বেশি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। সিলেট নগরের ২৫০ কিলোমিটার রাস্তায় পানি ওঠাতে আনুমানিক ৩০০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। প্রথম দফায় এ ক্ষতির পরিমাণ ছিল একশ’ কোটি টাকা। এবার নগরের বেশি পরিমাণ সড়কে পানি উঠেছে। বিশেষ করে নগরের উপশহরসহ কয়েকটি এলাকায় কয়েক মাস আগে কাজ করা সড়ক পানিতে তলিয়ে গিয়ে ভেঙে গেছে।
সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান জানিয়েছেন, বন্যায় বিশেষ করে সড়কের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া সুরমার তীর এলাকারও কিছু ক্ষতি হয়েছে। প্রথম দফা বন্যার চেয়ে দ্বিতীয় দফা বন্যায় বেশি ক্ষতি হয়েছে বলে জানান তিনি। সিলেট কৃষি সম্প্রসারণ তথ্যমতে; জেলার ১৩ উপজেলায় আউশ বীজতলা, সবজি ও বোনা আমন ধানের ১৫ হাজার ৫০৬ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন জেলার ৯৮ হাজার ৬৫৩ কৃষক। এতে ক্ষয়ক্ষতির আর্থিক পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৭৫ কোটি ২১ লাখ টাকায়।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সিলেট জেলার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বন্যায় সিলেটের ১৩টি উপজেলার ১৬০ কিলোমিটার সড়কের ক্ষতি হয়েছে। যার আর্থিক পরিমাণ প্রায় ১১৯ কোটি টাকা। সড়ক ও সেতু বিভাগ জানায়, বন্যায় সিলেট জেলার ৪০ কিলোমিটার সড়কের ক্ষতি হয়েছে। আর্থিক হিসেবে প্রায় ৮৫ কোটি টাকার ক্ষতি। সিলেট জেলা মৎস্য অধিদপ্তরের হিসেব মতে; বন্যায় সিলেট জেলায় ৪৪ কোটি ৮৫ লাখ ৬৬ হাজার টাকার মৎস্য সম্পদের ক্ষতি হয়েছে। জেলার ২১ হাজার ১১১টি পুকুর-দীঘি-খামারের মাছ বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। প্রথম দফায় এ ক্ষতির পরিমাণ ছিল ২৫ কোটি টাকার মতো। দ্বিতীয় দফা বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি হয়েছে।
এদিকে- নগরসহ গ্রামীণ এলাকায় অবকাঠামো খাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ২ থেকে ৩০০ কোটি টাকা হবে। এ ছাড়া- প্রধানমন্ত্রীর দেয়া সরকারি বাড়িরও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। জেলার বেশির ভাগ আশ্রয়ণ প্রকল্প ছিল পানির নিচে। কয়েকটি উপজেলায় এসব আশ্রয়ণ প্রকল্পে পানি থাকার কারণে লোকজন উঠতে পারেননি। এ ছাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধ ভেঙে প্রায় ৫০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
এদিকে- বন্যার পানি নামলেও গতকাল বিকাল থেকে চোখ রাঙাচ্ছে বৃষ্টি। সিলেট অঞ্চলে ফের শুরু হয়েছে বৃষ্টি। যদি এটি অব্যাহত থাকে তাহলে বন্যার পানি নতুন করে বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া কর্মকর্তারা। জুলাই থেকে ফের বন্যার আশঙ্কা রয়েছে সিলেট অঞ্চলে। ফলে এ অঞ্চলের মানুষের বন্যা নিয়ে সংশয় কাটছে না।
সিলেট জেলা প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে; বন্যায় সিলেটে এখনো ৭ লাখ ৮৪ হাজার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। ২৪৯টি আশ্রয়কেন্দ্রে সাড়ে ১২ হাজার মানুষ বসবাস করছে। বন্যার পানি নামলেও এখনো মানুষজন অনেক এলাকায় বাড়ি ফিরতে পারেনি। সিলেটের কানাইঘাট, অমলসীদ ও ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যার পানি নামতে শুরু করায় বর্তমানে কবলিত এলাকায় মেডিকেল টিমের কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে।