নামাজে হারানো খুশু কীভাবে ফিরে পাবেন?
প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ জুন ২০২৫
শায়খ সৈয়দ আনিসুল হক
আমরা যেন সালাত তথা নামাজকে কেবল একটি দৈনন্দিন আনুষ্ঠানিকতা হিসেবে না নিই। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আমাদের ঈমানের হৃদস্পন্দন । এটি আখেরাতে আমাদের সফলতার প্রথম মাপকাঠি । এটি সেই প্রথম প্রশ্ন যা কিয়ামতের দিনে আমাদেরকে করা হবে, যেমন নবীজি (সাঃ) বলেছেন: “কিয়ামতের দিন বান্দার যে আমলটির হিসাব প্রথমে নেওয়া হবে তা হলো তার নামাজ। যদি তা সঠিক হয়, তবে সে সফল ও মুক্তি পাবে । আর যদি তা বিঘ্নিত হয়, তবে সে ব্যর্থ ও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।” কিন্তু আমরা অনেকেই সালাতে দণ্ডায়মান হই কেবল শরীর দিয়ে, অথচ মন থাকে হাজার মাইল দূরে!
বলছিলেন ইস্ট লন্ডন মসজিদের সিনিয়র ইমাম শায়খ সৈয়দ আনিসুল হক। ১৩ জুন শুক্রবার জুমার খুতবায় তিনি কথাগুলো বলেন।
তিনি তাঁর দীর্ঘ খুতবার শুরুতে একটি প্রসিদ্ধ হাদীস বর্ণনা করেন। বলেন, এক সাহাবি নবীজির (সাঃ) সামনে সালাত আদায় করলেন । কিন্তু নবীজি বলেন: “ফিরে যাও এবং আবার আদায় কর, কারণ তুমি নামাজ পড়োনি।”
এটি তিনবার ঘটল, তারপর ওই সাহাবি বললেন, “আমাকে শেখান, হে আল্লাহর রাসূল ।” তখন নবীজি (সাঃ) তাঁকে শিখালেন কিভাবে শান্তি, ধীরতা, হৃদয় ও মনের উপস্থিতি সহকারে নামাজ আদায় করতে হয়।
এটাই হলো খুশু। সালাতকে কেবল শরীরের গতি যথেষ্ট নয়। আমাদের হৃদয়কে আল্লাহর সামনে দণ্ডায়মান থাকার জন্য প্রস্তুত করতে হবে – বিনয়ের সাথে, সজাগ দৃষ্টিতে, প্রতিটি শব্দ ও অঙ্গভঙ্গিকে আল্লাহর সাথে কথোপকথন মনে করে।
আল্লাহ বলেন: “নিশ্চয়ই সফল হয়েছে মুমিনরা — যারা তাদের সালাতে বিনয়ী। সূরা আল-মু’মিনূন, আয়াত ১–২।
নবীজী (সাঃ) বলেন, “এই উম্মতের মধ্য থেকে সর্বপ্রথম যে জিনিস উঠিয়ে নেওয়া হবে তা হলো খুশু, এমনকি তুমি আর কাউকে খুশু সহকারে সালাহ আদায় করতে দেখবে না।”
আজ আমরা তা-ই দেখছি। আমরা যখনই বলি “আল্লাহু আকবার”, তখন মন দৌড়ায় – পরিবার, কাজ, চিন্তা, দুনিয়া। সব কিছু আমাদের টেনে নিয়ে যায় সালাহ থেকে, আমাদের সেই মুহূর্ত থেকে যেটি আল্লাহর সাথে সংযুক্ত হওয়ার ছিল।
তাহলে আমরা কীভাবে খুশু ফিরে পেতে পারি?
১. সালাহ শুরুর আগেই প্রস্তুতি নিন : সঠিকভাবে ওযু করুন। তাড়াহুড়া নয়, বরং ধ্যান ও সচেতনতার সাথে। নবীজি (সাঃ) বলেছেন: “যে ব্যক্তি উত্তমভাবে ওযু করে, তার গুনাহসমূহ শরীর থেকে ঝরে যায়, এমনকি নখের নিচ থেকেও।”
সময়মতো মসজিদে যান । সালাহর আগেই কিছু সময় নিন মন স্থির করার জন্য। ভাবুন, আপনি কার সামনে দাঁড়াতে যাচ্ছেন।
২. মনোযোগ থেকে বিভ্রান্তকারী বস্তু সরান:
ইমাম নববী (রহ.) বলেছেন, এমন অবস্থায় সালাত পড়া মাকরুহ যখন সামনে প্রিয় খাবার থাকে, বা পেশাব-পায়খানার চাপ থাকে । আজকের যুগে তার সাথে যোগ করুন মোবাইল ফোন ও শব্দপূর্ণ পরিবেশ।
৩. আপনি যা বলছেন তা বুঝুন:
আমরা কীভাবে আল্লাহর সামনে দাঁড়িয়ে কুরআনের আয়াত পাঠ করি অথচ বুঝিই না? এটি যেন এমন কারো সাথে কথা বলা, যার ভাষা আমরা বুঝি না।
প্রতিটি “আল-হামদুলিল্লাহ” আমাদের হৃদয় ভরে দিক কৃতজ্ঞতায় । প্রতিটি “আল্লাহু আকবার” আমাদের মনে করিয়ে দিক তাঁর মহত্ব। হৃদয় জাগানোর জন্য কিছু অনুপ্রেরণার উদাহরণ। ইমাম বুখারী (রহ.) একবার নামাজরত অবস্থায় একটি বোলতা তাঁকে ১৭ বার হুল ফোটায়, তবুও তিনি নড়েননি । কারণ? তিনি বললেন: আমি একটি সূরার মাঝখানে ছিলাম, এবং আমি তা শেষ করতে চেয়েছিলাম।
আব্দুল্লাহ ইবনু যুবায়ের (রাঃ) এর নামাজ এতটাই স্থির ছিল যে পাখিরা এসে তাঁর পিঠে বসে যেত, মনে করত তিনি একটি মূর্তি।
তাহলে আমরা পরিবর্তনের সূচনা কিভাবে করব?
আমরা রাতারাতি সাহাবাদের মতো হতে পারব না। কিন্তু আজ থেকেই একটি পদক্ষেপ নিতে পারি।
পরবর্তী সালাহ থেকে শুরু করুন। ওযু করুন একান্ত চিত্তে। মনোযোগ হরণকারী সবকিছু সরিয়ে দিন । করআনের অর্থ শিখুন । ধীরস্থিরভাবে সালাহ আদায় করুন।
ইস্ট লন্ডন মসজিদ। শুক্রবার, ১৩ জুন ২০২৫ ।