বৃটেনের মধ্যবর্তী নির্বাচনের বাকি মাত্র ৫ দিন : কে হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী
প্রকাশিত হয়েছে : ০১ জুন ২০১৭
“কনজারভেটিভ ২০টি আসন হারাতে পারে : লেবারের বাড়তে পারে ২৮টি”
লেবারের ইশতিহার:
০ ৫ বছরে এনএইচএস বরাদ্দ ৩০ বিলিয়ন পাউন্ড
০ ইউনিভার্সিটির টিউশন ফি বাতিল
০ ইমিগ্রেশন নীতিতে চাকরির বাজারে অগ্রাধিকার
০ ১০ লাখ ঘর নির্মাণ ও হেল্প-টু-বাই স্কীম অব্যাহত
কনজার্ভেটিভের ইশতিহার :
০ ৫ বছরে এনএইচএস বরাদ্দ ৮ বিলিয়ন বৃদ্ধি পাবে
০ প্রতিবছর কমপক্ষে ১০০টি ফ্রি স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হবে
০ ইমিগ্র্যান্ট লাখের ঘর থেকে হাজারে নামবে
০ ১০ লাখ ঘর নির্মাণ করা হবে
দেশ রিপোর্ট: বৃটেনের মধ্যবর্তী নির্বাচনের দিন যতো ঘনিয়ে আসছে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে জেরেমি করবিনের নেতৃত্বাধীন লেবার পার্টির সমর্থন ততোই বাড়ছে। কিছুদিন আগেও জনমত জরিপগুলোতে বিপুলভাবে এগিয়েছিল ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টি। কিন্তু দ্যা টাইমস সংবাদপত্রের উদ্যোগে করা সর্বশেষ জনমত জরিপের ফলাফলে দেখা যায়, কনজারভেটিভ পার্টি ২০টি আসন হারাতে পারে আর লেবার পার্টির আসন ২৮টি বাড়তে পারে। জরিপকারী প্রতিষ্ঠান ইউগভ এর উদ্যোগে করা জরিপের ফল সত্য হলে কনজারভেটিভ পার্টির আসন ৩৩০টি থেকে কমে দাঁড়াবে ৩১০টিতে, যা নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা থেকে ১৬টি কম। অন্যদিকে, লেবার পার্টির আসন সংখ্যা ২২৯টি থেকে বেড়ে দাঁড়াতে পারে ২৫৭টিতে। লিবডেমের আসন ৯টি থেকে ১০টিতে উন্নীত হতে পারে, স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টি ৫০টি আসন, গ্রীন পার্টি ১টি আর প্লাইড কামরি ৩টি আসন পেতে পারে বলে জরিপের ফলাফলে জানানো হয়েছে।
এক সপ্তাহব্যাপী ৫০ হাজার লোকের মধ্যে পরিচালিত হয় এই জরিপ। এতে সব ধরনের ভোটারকে বেছে নেওয়া হয়েছিল। সাম্প্রতিক গণভোটে তাঁরা কীভাবে ভোট দিয়েছিল, তাঁদের বয়স, কোথায় বসবাস এবং অন্যান্য নেপথ্য তথ্য বিশ্লেষন করেছে ইউগভ। এরপর সেই তথ্যের সাথে অফিস অব ন্যাশনাল স্ট্যাটিসটিক্সের ডাটা, ব্রিটিশ ইলেকশন স্টাডিজের তথ্য এবং অতীতের নির্বাচনের ফলাফলগুলোর সাথে মিলিয়ে প্রত্যেকটি আসনের জন্য আলাদা-আলাদা সম্ভাব্য ফলাফলের তালিকা তৈরি করেছে জরিপকারী প্রতিষ্ঠানটি। তবে জরিপের ফলাফল প্রকাশ করে ইউগভ এ কথাও বলেছে যে, নির্বাচনের দিন ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে ভোটারদের মানসিকতায় ব্যাপক পরিবর্তনও ঘটতে পারে। কনজারভেটিভের জন্য ৮জুন খুব বেশি খারাপ হলে তারা ২৭৪টি আসন পেতে পারে আর খুব ভালো দিন হলে ক্ষমতাসীন দলটি ৩৪৫টি আসন পেতে পারে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে জরিপে।
এদিকে, স্কাইনিউজ টেলিভিশন ও বিবিসি টেলিভিশনে দুই দফা বিতর্কসহ দেশব্যাপী বিভিন্ন ছোট বড় সমাবেশে বড় দুই দলসহ অপেক্ষাকৃত ছোট দলগুলো এবং আঞ্চলিক দলগুলো ইতোমধ্যে নিজেদের নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করেছে। তবে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের আগ্রহ ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ দল ও প্রধান বিরোধীদল লেবার পার্টির ইশতেহারের প্রতি। প্রধান কয়েকটি ইস্যুতে ক্ষমতাপ্রত্যাশী প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী ইশতেহারের কী আছে তা দেখে নেয়া যাক:
ব্রেক্সিট: ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো থেকে আসা ইমিগ্র্যান্টদের নিয়ন্ত্রণ করতে চায় কনজারভেটিভ দল। পাশাপাশি ব্রিটেনে বসবাসরত ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোর নাগরিক ও সেসব দেশে বসবাসরত ব্রিটিশ নাগরিকদের অধিকার নিশ্চিত করতে চায় এই দল। ইউনিয়নের নাগরিকদের ফ্রি মুভমেন্ট বাতিল করে একটি ‘কমন ট্রাভেল এরিয়া’ বাস্তবায়ন করতে চায় কনজারভেটিভ। সর্বোপরি ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতাদের সাথে দরকষাকষি করে ব্রিটেনের জন্য সবচেয়ে ভালো একটা প্রস্তাব (ডিল) বাস্তবায়ন করতে চায় তারা। খারাপ ডিল (প্রস্তাব) এর চেয়ে নো ডিল (খালি হাতে) ফিরে আসার চিন্তা-ভাবনাও করছে এই দলটি। অন্যদিকে, লেবার পার্টি ক্ষমতায় গেলে কনজারভেটিভ পার্টির ব্রেক্সিট সংক্রান্ত পরিকল্পনা বাতিল করে দেবে। তারা সিঙ্গেল মার্কেটে (অভিন্ন বাজার) থাকা ও কাস্টমস ইউনিয়নে থাকার কথা মাথায় নিয়ে নতুন করে দরকষাকষি শুরু করবে।
হেলথ: আগামী ৫ বছরে এনএইচএস এর বরাদ্দ ৮ বিলিয়ন বৃদ্ধি করবে কনজারভেটিভ। ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো থেকে আসা ১৪০ হাজার এনএইচএস কর্মী যাতে কোনো প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই তাদের কাজ চালিয়ে যেতে পারে সে লক্ষ্যে ব্রেক্সিট সংক্রান্ত দরকষাকষিতে গুরুত্ব দেবে কনজারভেটিভ দল। এছাড়া বিদেশীরা এনএইচএস এর সেবা গ্রহণ করলে তার খরচ ওই বিদেশীদের নিকট থেকে আদায় করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে কনজারভেটিভ দল। অন্যদিকে, এনএইচএস এর আর্থিক বরাদ্দের উপর আরোপিত সীমা বাতিল করে আগামী ৫ বছরে অতিরিক্ত ৩০ বিলিয়ন পাউন্ড বরাদ্দের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে লেবার পার্টি। এক মিলিয়ন রোগীকে এনএইচএস এর অপেক্ষমান তালিকা থেকে মুক্তি দিয়ে ১৮ দিনের মধ্যে তাদের চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে লেবার। এনএইচএস ইংল্যান্ডের রোগী, কর্মী ও ভিজিটরদের জন্য বিনামূল্যে পার্কিং সেবা দেবে লেবার পার্টি। এছাড়াও জিপি সার্ভিসগুলোতে আর্থিক বরাদ্দ বৃদ্ধিসহ মেন্টাল হেলথ বাজেটের অর্থ আলাদাভাবে জমা রাখারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে লেবার পার্টি।
এডুকেশন: ২০২২ সাল নাগাদ স্কুলের বাজেট গড়পড়তা ৪ বিলিয়ন পাউন্ড বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি রয়েছে টোরি দলের। প্রতিবছর কমপক্ষে ১০০টি ফ্রি স্কুল প্রতিষ্ঠা করবে দলটি। এছাড়া অফস্ট্যাড রিপোর্টে যেসব স্কুল ‘ইনএডিকুয়েট’ কিংবা ‘রিকয়ার্স ইমপ্রুভমেন্ট’ হিসাবে গণ্য হবে সেসব স্কুলের আসন সংখ্যা না বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি আছে কনজারভেটিভের। এছাড়া প্রথম তিন বছর ফ্রি স্কুল লাঞ্চের পরিবর্তে প্রাইমারি স্কুলের প্রতিটি শ্রেণীতে প্রতি বছর ফ্রি ব্রেকফাস্ট দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে কনজারভেটিভ দল।
অন্যদিকে, ইংল্যান্ডের জন্য একক শিক্ষা সেবা বাস্তবায়ন করবে লেবার পার্টি। ইউনিভার্সিটি টিউশন ফি বাতিল করার পাশাপাশি ১৬ থেকে ১৮ বছর বয়স্ক ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য এডুকেশন মেইন্টেন্যান্স অ্যালাওয়েন্স আবার চালু করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে লেবার পার্টি। সাথে সকল স্কুল ছাত্রের জন্য ফ্রি স্কুল মিল দেওয়ার প্রতিশ্রুতি রয়েছে লেবার পার্টির ইশতেহারে।
ইমিগ্রেশন: ইমিগ্রেশনকে টেকসই মাত্রায় কমিয়ে আনার ঘোষণা দিয়েছে টোরি দল। অর্থাৎ লাখের ঘর থেকে হাজারের ঘরে নামিয়ে আনার পরিকল্পনা করেছে টোরি দল। পরিবারের সদস্যদেরকে নিজ দেশ থেকে ব্রিটেনে আনতে হলে আগের চেয়ে আয়-রোজগার আরো বেশি দেখানোর শর্ত আরোপ করবে টোরি দল। বার্ষিক ইমগ্রেশন সংখ্যায় বিদেশী ছাত্রদের গণনা অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছে টোরি দল। বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের সংঘাত ও দ্বন্দ্বের কারণে শরণার্থী হওয়া লোকদের আশ্রয় দেবে কনজারভেটিভ দল, তবে আশ্রয় প্রার্থীর সংখ্যা কমিয়ে আনতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে তারা।
অন্যদিকে, ইমিগ্রেশনের ক্ষেত্রে বার্ষিক লক্ষ্য নির্ধারণের মতো ভিত্তিহীন কাজ না করে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, সমৃদ্ধি ও চাকরির বাজারকে অগ্রাধিকার দিয়ে ইমিগ্রেশন নীতি বাস্তবায়ন করবে লেবার পার্টি। বার্ষিক ইমিগ্রেশন সংখ্যার সাথে বিদেশী ছাত্রদের সংখ্যাকে অন্তর্ভূক্ত না করার ঘোষণা দিয়ে লেবার পার্টি বলেছে, ভুয়া কলেজগুলোর বিরুদ্ধে তাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
হাউজিং : ২০১৫ সালে দেওয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের অংশ হিসাবে ২০২০ সালের শেষ নাগাদ ১০ লাখ ঘর নির্মাণ করবে কনজারভেটিভ দল। ২০২২ সালের শেষ নাগাদ আরও ৫ লাখ ঘর বরাদ্দের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে কনজারভেটিভ দল। ঘর নির্মাণের জন্য বিভিন্ন এলাকায় নতুন নতুন জায়গা ছাড় করবে টোরি। নতুন ফিক্সড-টার্ম স্যোশাল হাউজ নির্মাণ করে ১০ থেক ১৫ বছর পর ওইসব ঘরের ভাড়াটেদের কাছে ঘরগুলো বিক্রি করবে টোরি দল। অন্যদিকে, লেবার পার্টি প্রতিবছর ১০ লাখ নতুন ঘর নির্মাণ করার পাশাপাশি এক লাখ কাউন্সিল ও হাউজিং এসোসিয়েশনের মালিকানাধীন ঘর নির্মাণ করবে। ফার্স্ট টাইম বায়ারদের জন্য আগামী ২০২৭ সাল পর্যন্ত হেল্প-টু-বাই স্কীম অব্যাহত রাখবে লেবার পার্টি। প্রাইভেট রেন্টারদের ভাড়া যাতে লাগামহীনভাবে না বাড়ে সে লক্ষ্যে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করবে লেবার পার্টি। সংশ্লিষ্ট কাউন্সিল যত দিন পর্যন্ত না একই সংখ্যক ঘর নির্মাণ করার প্রমাণ দিতে না পারবে ততোদিন পর্যন্ত ওই কাউন্সিলে রাইট-টু-বাই স্থগিত করবে লেবার পার্টি। বেডরুম ট্যাক্স বাতিল করার পাশাপাশি ১৮ থেকে ২১ বছর বয়স্কদের হাউজিং বেনিফিট বাতিলের সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে লেবার পার্টি।