ইস্ট লন্ডন মসজিদের জুমার খুতবা : “রমজান আসছে, আসুন খাবারের অপচয় থেকে বিরত থাকি”
প্রকাশিত হয়েছে : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
শায়খ আব্দুল কাইয়ুম
আমরা জানি, রমজানে একজন রোজাদারকে ইফতার করালে সারাদিন রোজা রাখার সাওয়াব পাওয়া যায় । আর তাই রমজানে অনেক বেশি ইফতার তৈরি করা হয় । এরপর এতো ইফতার খাওয়া সম্ভব হয়না । অবশিষ্ট ইফতার ডাস্টবিনে ফেলে দিতে হয় । এটা অনেক বড় গোনাহের কাজ । রমজান আমাদেরকে খাবারের অপচয় থেকে বিরত থাকার শিক্ষা দেয় । আসুন, আমরা রমজানে সেই শিক্ষার চর্চা শুরু করি ।
কথাগুলো বলেছেন ইস্ট লন্ডন মসজিদের প্রধান ইমাম ও খতীব শায়খ আব্দুল কাইয়ুম। তিনি গত ৭ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার জুমআর খুতবায় কথাগুলো বলেন।
তিনি বলেন, রমজানে ইফতার মাহফিল আয়োজনের একটি রেওয়াজ আছে। কিন্তু এই ইফতার মাহফিল আয়োজন করতে গিয়ে আমরা ক্লান্ত হয়ে পড়ি। এরপর যখন মাগরিবের নামাজ পড়তে যাই তখন ইফতারি পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করতে অনেক সময় ব্যয় হয় । এতে করে কোনো কোনো সময় দুই-এক রাকাত নামাজ মিস হয়ে যায় । উপরন্ত নামাজ থেকে ফিরে গিয়েও আবার ইফতারি গোছাতে হয় । এতেও অনেক সময় লাগে। এরপর এশা ও তারাবির নামাজে আসার পর শরীরে আর বল থাকেনা । দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এতো ব্যস্ত থাকতে হয় যে, নামাজে যাওয়ার পর চোখে ঘুম চলে আসে। মসজিদে শুয়ে পড়তে মন চায়। নামাজে মনোযোগ থাকেনা।
তিনি বলেন, মানুষকে খাওয়ালে সাওয়াব হয় ঠিকই। কিন্তু এ জন্য এতো খাটুনি করলে আসল জিনিসই মিস করে ফেলবো । তাই মানুষকে কতটুকু খাওয়াবো । কতটুকু ইফতারি প্রয়োজন ।বিষয়টি আগেই চিন্তায় রাখা উচিত । শুধু সাওয়াব হবে ভেবে খাবারের পেছনে দৌঁড়ালে চলবেনা। আল্লাহ তায়ালা কিসে ফায়দা দেবেন, বিষয়টি মাথায় রাখা দরকার।
শায়খ আব্দুল কাইয়ুম আরো বলেন, রমজানে আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে ইফতারী দেওয়া ভালো কাজ । কিন্তু এতে যদি ডিমাণ্ড থাকে যে, ছেলের শ্বশুর বাড়ি থেকে অনেক বেশি ইফতারী আসতে হবে । এতো কম আনছে কেন । বেশি ইফতারী না দিলে আত্মীয় স্বজনকে বিলিয়ে দেওয়া যাবে না । অবশিষ্ট ইফতারি ডাস্টবিনে ফেলা যাবেনা। এসব রেওয়াজ থেকে আমাদের সরে আসতে হবে । ইফতার খাওয়া ও খাওয়ানো ইবাদত । কিন্তু এটাকে একটি সামাজিক দায়িত্ব ও কর্তব্য হিসেবে চাপিয়ে দেওয়া কিছুতেই ঠিক নয়। এসব আল্লাহ তায়ালা অপছন্দ করেন।
তিনি খুতবার শুরুতে পবিত্র কুরআনের আয়াত উল্লেখ করে বলেন, আল্লাহ তায়ালা বলেছেন “তোমরা খাও, পান করো । কিন্তু সাবধান, কখনো অপচয় করোনা। আল্লাহ তায়ালা কখনো অপচয়কারিকে পছন্দ করেন না।
অপর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, মুমিনরা যখন খায় তখন অপচয় করেনা । আবার কৃপনতাও করেনা। তারা মাঝামাঝি অবস্থায় সুন্দর তরিকায় খরচ করে।
রাসুল (সাঃ) বলেছেন- তোমরা খাও, পান করো। পোশাক পরো । সাদাকা দাও। কিন্তু কখনো অপচয় করোনা । আল্লাহ অপচয়কারিকে বলেছেন শয়তানের ভাই।
ইমাম আব্দুল কাইয়ুম বলেন, আমরা দেখি রাসুল (সাঃ) কিভাবে অপচয় থেকে দুরে থাকতেন । তিনি খাওয়ার সময় আঙুলে লেগে থাকা খাবার ভালোভাবে পরিস্কার করে খেতেন । যে প্লেটে খেতেন তার সবটুকু খেতেন । তিনি বলেছেন, যদি কখবনো খাবার পড়ে যায়, তাহলে খাবারের যে অংশে ময়লা লেগে যায়, তা ফেলে দিয়ে বাকিটুকু খেতে হবে । ফেলে দেওয়া যাবেনা। কারণ তোমরা জানোনা খাবারের কোন অংশে বরকত রয়েছে । সে জন্য তিনি আঙল পরিস্কার করে খেয়েছেন। প্লেট পরিস্কার করে খেয়েছেন। যে হান্ডিতে রান্না করা হয়, তাও পরিস্কার করে খেতে বলেছেন। কারণ খাবারের ওই অংশের বারাকা থেকে আমরা বঞ্চিত হতে পারি ।
তিনি বলেন, রমজান আসছে। ইফতারে আমার বাড়িতে কতজন মেহমান আসবে, তা জেনে নিয়ে যেন পরিমিত রান্না করি। এতো বেশি যেন রান্না না করি যে, আত্মীয় স্বজনকে নিয়ে খেয়ে শেষ করতে পারিনা। অবশিষ্ট খাবার ডাস্টবিনে ফেলে দিতে হয়। এটা আল্লাহ তায়ালার কাছে বড় অপরাধ।
কেউ বলতে পারেন, আমি তো অন্য কারো খাবার ফেলছিনা ।আমার খাবার ফেলছি। তাতে অসুবিধা কী। কিন্তু আপনাকে বুঝতে হবে, আপনি যে খাবার ফেলছেন সেই খাবার তো আল্লাহ তায়ালাই আপনাকে দিয়েছেন। আপনার তা ফেলে দেওয়ার অধিকার নেই।
তাই আসুন, আমরা পরিমিত রান্না করি। পরিমত খাই এবং অন্যদের খাওয়াই । আল্লাহ তায়ালা যেন আমাদেরকে অপচয় থেকে বিরত রাখেন। আমিন।